রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, খুনের বদলে খুন যেমন কোনো সমাধান নয়, বাঁধের বদলে বাঁধও বন্যার সমাধান নয়। এগুলো আজগুবি চিন্তা। বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ আটকে রাখা যায় না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই নদী গবেষক এ কথা বলেন। মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আন্তসীমান্ত নদীতে সংশ্লিষ্ট সব দেশের সমান অধিকার। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পানির ন্যায্য হিস্সা বুঝে নিতে হবে। বর্ষাকালে যেন অতিরিক্ত পানি না আসে, আবার শুষ্ক মৌসুমে যেন পানি কম না পাই। এজন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে। তিনি বলেন, বন্যার ঝুঁকি কমাতে তিনটি কাজ করা জরুরি। প্রথমত, ভারত যেসব নদীতে বাঁধ দিয়েছে সেগুলোতে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে। পানিপ্রবাহ নিয়ে সার্বক্ষণিক তথ্য উভয় দেশ পাবে এবং পানি ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত দুই দেশ মিলে নেবে। প্রয়োজনে বাঁধগুলো নির্মাণে ভারত যা খরচ করেছে, তার অংশ আমাদের দিয়ে দিতে হবে। শর্ত একটা- নিয়ন্ত্রণ যেন দুই দেশেরই থাকে। দ্বিতীয়ত, উভয় দেশের জন্য স্মার্ট বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। জাপানে যেভাবে সুনামি সতর্কতা দেওয়া হয়, তেমনি সাধারণের বোধগম্য ভাষায় বন্যার কয়েকদিন আগেই সবার মোবাইলে সতর্কবার্তা পাঠাতে হবে। তৃতীয়ত, দখলকৃত সব নদনদী উদ্ধার করে, ড্রেজিং করে এর নাব্য বাড়াতে হবে। স্থানীয় জনগণকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। কোনোভাবেই যেন নদী দখল না হয়।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় উজানের পানি আটকাতে ভারত যেসব আন্তসীমান্ত নদীতে বাঁধ দিয়েছে, সেসব নদীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ দেওয়ার কথা বলছেন। এজন্য টাকা-পয়সাও দিতে চাইছেন। আমি বলব- সরকারের এখন টাকার অভাব আছে, এ টাকা সরকারকে দিয়ে দিন। বাংলাদেশ ভাটির দেশ। স্বাভাবিকভাবেই উজানের পানি এখান দিয়েই নামবে। বেশি বৃষ্টি হলে সেই পানি সাগরে যেতে না পারলে বন্যা হবে। বাঁধ দিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। উল্টো হিতে বিপরীত হতে পারে। এ ছাড়া এতগুলো বাঁধ দিতে ব্যয় কত হবে সেই ধারণাই নেই অনেকের। বাঁধের বিপরীতে সমাধান হচ্ছে বাঁধ সরিয়ে দেওয়া। ভারত ৩০টি আন্তসীমান্ত নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদের নদনদীগুলোর নাব্য নষ্ট করেছে। অথচ আন্তসীমান্ত নদীতে কিছু করতে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সম্মতি নিতে হয়। সেটা তারা করেনি। এখন ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে। প্রয়োজনে বাঁধ নির্মাণে যে খরচ হয়েছে তার একটা অংশ আমরা দিয়ে দিতে পারি। তারা শুষ্ক মৌসুমে পানি কম দিচ্ছে, বর্ষা মৌসুমে বেশি পানি ছেড়ে দিচ্ছে। এতে একদিকে নদীগুলো প্রবাহ হারিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বর্ষাকালে বন্যার কবলে পড়ছে দেশ। ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসে কোন মৌসুমে কতটুকু পানি আসা যৌক্তিক সেটা নির্ধারণ করতে হবে। সেটা বাস্তবায়নে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে। এটা আমাদের অধিকার।