দেশের শিল্পকারখানা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠী কারখানায় ভাঙচুর, বিক্ষোভ ও হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের। গাজীপুরে ১১টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর ও দুটিতে লুটপাট হয়েছে। ফলে তৈরি পোশাক, ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের শতাধিক কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়া ও গাজীপুরের ৮৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন শিল্পখাতে এমন অস্থিরতার পেছনে একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। এ ছাড়াও শিল্প কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শ্রমিক আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করেছে একটি গোষ্ঠী। সরকার ও শিল্প মালিকরা মনে করেন, পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে বহিরাগতরা কারখানায় হামলা করছে। এর সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকরা জড়িত নন। গত রবিবারের মতো সোমবারও সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী ও গাজীপুরের শতাধিক কারখানায় হামলা চালিয়েছে বহিরাগতরা। পরে এসব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। শিল্পপুলিশ ও বিজিএমইএর তথ্য মতে, তৈরি পোশাক, ওষুধ, খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের শতাধিক কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। বিক্ষোভ শুরুর পর আশুলিয়ায় ৪০টি ও গাজীপুরে ৪৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর বাইরে একটি ওষুধ কোম্পানির কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। গত সোমবার গাজীপুরে ১১টি তৈরি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর হয়েছে। দুটি কারখানায় লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। শতাধিক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। গতকাল সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসায়ীরা এ অনুরোধ জানান। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যেসব কারখানার ভিতরে শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, সেই দাবিগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে কারখানার ফটকে বহিরাগত শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন। বহিরাগতরা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা মালিকেরা লে অফ ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। তখন পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। এর আগে গত সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠকে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাতে হামলা ও ভাঙচুরের জন্য দেশি-বিদেশি চক্রকে দায়ী করা হয়। পোশাক কারখানার মালিকরা বলেন, শ্রম অসন্তোষের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। যারা আন্দোলন করছে, তারা কেউই শ্রমিক নন, সবাই বহিরাগত।’ পুরুষ শ্রমিক বেশি নিয়োগের যে দাবি করা হচ্ছে, সেটি উদ্ভট। এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা বাবুল আখতার বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, সেনাবাহিনী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আলাদা করে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধান করা দরকার। পাশাপাশি শিল্পপুলিশকে কার্যকর করতে হবে।