শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পোশাক খাতে অস্থিরতার পেছনে অনেক রকমের ঘটনা ঘটছে। এখানে সুনির্দিষ্ট একটি বিষয় দিয়ে গোটা পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। আগে ঝুট ব্যবসা ছাত্রলীগ-যুবলীগ নিয়ন্ত্রণ করত। এখন তা বিএনপির লোকজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এটি একটি দখলদারিত্বের ব্যাপার হয়ে গেছে। অন্যদিকে শ্রমিকদের কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিদাওয়াও আছে। শ্রমিকরা চাচ্ছে তাদের টিফিনের টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হোক। এ ছাড়া শ্রমিকরা ছুটির কথাও বলছে। এখানে তাদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টিও আছে। আমরা শ্রমিকদের জন্য যে দাবিদাওয়ার কথা বলছি সেখানেও মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি আছে। ২০২৩ সালে আমরা দাবি করেছিলাম ন্যূনতম মজুরি হতে হবে ২৫ হাজার টাকা। আমরা এখনো সেই দাবিতেই আছি।
এই শ্রমিক নেত্রী আরও বলেন, আমাদের স্থানীয় যে নেতারা গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সেখানে বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকরা নিজেদের সুনির্দিষ্ট দাবি লিখে কারখানার নোটিস বোর্ডে উপস্থাপন করেছেন। তারা আরও জানান, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কারখানা মালিকরা তাদের কারখানাগুলোতে এ অস্থির অবস্থা তৈরি করছেন। এ মালিকরা এক ধরনের সমবেদনা তৈরি করতে চান। আর এজন্য তারা শ্রমিকদের সঙ্গেও উসকানিমূলক আচরণ করছেন। অনেক কারখানার মালিক, শ্রমিকরা কিছু না বললেও কারখানা বন্ধ রেখেছেন। শ্রমিকরা এক ধরনের অনিশ্চয়তায় থাকেন মজুরি নিয়ে যে কারখানা বন্ধ থাকলে তারা মাস শেষে মজুরি পাবেন কি না। আর তারা কাজ করতে গিয়ে যখন কারখানা বন্ধ দেখেন তখন ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এখানে পরিকল্পিতভাবে কিছু ব্যাপার ঘটছে। এর সঙ্গে মালিকদের একটি অংশ জড়িত। এ বিষয়টি দেরিতে হলেও আমরা ধরে ফেলতে পেরেছি।
মোশরেফা মিশু বলেন, এখানে নানা ধরনের চক্রান্ত আছে। বিভিন্ন মহলের উসকানি আছে। তারপরও আমি আশাবাদী, আমাদের পোশাক খাত হারিয়ে যাবে না। তিনি বলেন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম এ দেশগুলো পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের মজুরি এসব দেশের চেয়েও অনেক কম। এসব দেশে শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো অনেক বেশি নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে শ্রমিকরা অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে থাকে এবং অপুষ্টির শিকার। অথচ তারা দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। সেই শ্রমিকদের পরিস্থিতিই এত খারাপ। আমি মনে করি, বাংলাদেশের মতো এত সস্তা বাজার ছেড়ে ক্রেতারা চলে যাবেন এটি অসম্ভব।
চীনের শ্রমিকদের মজুরি আমাদের শ্রমিকদের দ্বিগুণেরও বেশি। তবে এত অসন্তোষ সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক খাত থেকে ক্রেতারা দূরে যাবেন না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের মুনাফা। সস্তা শ্রমের মধ্য দিয়ে তাদের মুনাফা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর আর কোনো দেশে তারা এ মুনাফা অর্জন করতে পারবেন না।