দেশজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত সেপ্টেম্বরজুড়ে তান্ডব চালিয়েছে ডেঙ্গু। এক মাসেই ১৯ হাজার ২৪১ জন রোগী ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। থেমে থেমে বৃষ্টি এবং ধীরগতির মশক নিধন কার্যক্রমে অক্টোবরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার শঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে জানা যায়, এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৫ জন, মৃত্যু হয় ১৪ জনের; ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, মৃত্যু হয় তিনজনের; মার্চে রোগী ছিল ৩১১ জন, মৃত্যু পাঁচজনের; এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪ জন, মৃত্যু দুজনের; মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ জন, মৃত্যু ১২ জনের; জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ জন, মৃত্যু আটজনের। বছরের মাঝামাঝিতে জুলাই মাস থেকে রোগী বাড়তে থাকে; ছাড়িয়ে যায় ২ হাজারের ঘর। এ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। আগস্টে কয়েকগুণ বেড়ে রোগী হয় ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু ২৭ জন। আর আগস্টের তুলনায় তিনগুণ বেশি রোগী সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয়, মৃত্যুও হয় তিনগুণ বেশি। অক্টোবরের প্রথম দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৪৪ জন রোগী, মারা গেছেন তিনজন। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আটজন, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৭ জন।
গত দুই বছরের মতো এবারও মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুর ডেন-২ সেরোটাইপ বা ধরনে। তবে গত দুই বছর ঢাকাসহ দেশের মানুষ এই ডেন-২ সেরোটাইপে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউিট (আইইডিসিআর) এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫০ জন রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করেছে। এ পরীক্ষায় দেখা যায় ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুরোগীর ধরন ছিল ডেন-২। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণের যে চিত্র আমরা দেখছি তা দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে অবস্থা খারাপ।
অক্টোবরেও ডেঙ্গু আমাদের ভোগাবে। এখন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটা জোরদার করা দরকার। বৃষ্টি মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি করবে। সম্ভাব্য সব প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।