যৌথ বাহিনীর আশ্বাসে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ছেড়ে দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বার্ডস গ্রুপের আন্দোলনরত শ্রমিকরা। এতে টানা ৫৩ ঘণ্টা পর মহাসড়কটিতে গতকাল দুপুরের পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেপ্তারের খবরে গতকাল দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেন। এরপর সড়কটিতে যানচলাচল শুরু হয়। বিকাল নাগাদ যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে। এর আগে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দফায় দফায় অবরোধকারী শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারখানা মালিককে আটক করে পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে বকেয়া আদায়ের দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রুপের মালিকানাধীন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে পার্শ্ববর্তী বাইপাইল আবদুল্লাহপুর সড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। দীর্ঘ যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক। অবরোধকারী শ্রমিকরা জানান, বুধবার (গতকাল) প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয় বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যানজটের কারণে তাকে কারখানায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। রাস্তা ফাঁকা করতে হবে। এমন খবরে আমরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করলেও ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনেফিটসহ ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের আরও তিন মাস সময় চায় প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিকে, ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. শাহীনুর কবির জানান, শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করার পর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর চেষ্টায় সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করেছে। গাজীপুরে চাকরির দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ : চাকরিসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকরা গতকাল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এদিন সকাল ৮টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া চৌধুরী বাড়ি এলাকায় ফ্লাইওভারের গোড়ায় ওই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতি মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত বেশির ভাগ কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে কারখানাগুলোর গেটে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের নোটিস টানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা বিভিন্ন কারখানায় চাকরির জন্য গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছে না। অনেক কারখানায় নারী শ্রমিকদেরও ছাঁটাই করে দেওয়া হচ্ছে। চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং পুরুষ শ্রমিকদের চাকরিতে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে তারা। পুরুষ শ্রমিকেরা চাকরিতে যোগদান করার পর অযথা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন এমন অভিযোগে তারা পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছেন না। শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ থাকার কথা লেখা থাকলেও গোপনে নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) অশোক পাল জানান, চাকরিসহ বিভিন্ন দাবিতে তৈরি পোশাক কারখানার বেশ কিছু শ্রমিক বিক্ষোভ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় কয়েকটি কারখানায় বুধবারের (গতকাল) জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অপরদিকে, আমাদের কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চার ঘণ্টা চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই দুটি মহাসড়কে চলাচলরত পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। এলাকাবাসী, শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় গতকাল সকালে ও নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু তাতেও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।