শেরপুরে পানি কমে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। এ জেলায় পৌনে ২ লাখ কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। জেলার নকলা উপজেলায় রবিবার রাতে বন্যার পানিতে ডুবে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটজনে। বৃষ্টি না থাকায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ফুলপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও আরেকটি ইউনিয়নে প্লাবিত হয়েছে। ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন এ উপজেলায়। নেত্রকোনা জেলার কংস, সোমেশ্বরী উব্দাখালী নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে চার উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নতুন করে সদর উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নেত্রকোনা : জেলার কংস, সোমেশ্বরী উব্দাখালী নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে চার উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নতুন করে সদর উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ১২ হাজার ২২৪ হেক্টর আমন আবাদ তলিয়ে গেছে।
গতকাল সকাল থেকে রোদ উঠায় নদীগুলোর পানি কিছুটা কমলেও কংস পাড়ের পূর্বধলা উপজেলার নাটেরকোনা গ্রামের কালিদাস বাঁধ প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে যায়। এতে একপাশের শহীদ মিয়ার ঘর পানিতে ভেসে যায়। অপর প্রান্তে হযরত আলী ঘরটি রয়েছে ভাঙনের হুমকিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে কিছু পানি সরলেও রেললাইনের পাশের কালভার্ট বন্ধ করে পুকুর দেওয়ায় নাটেরকোনা পূর্বপাড়ার পানি নামছে না। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছেন। তবে রেলের জায়গায় ফিশারি দিয়ে কালভার্ট বন্ধ করে রাখার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এদিকে গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস এলাকা পরিদর্শন করে জানান, ৮০ জন আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। এ ছাড়া ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার কথা জানান। তিনি বলেন খাবারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ, খননে অনিয়ম এবং মানুষ সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
শেরপুর : মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমছে। গতকাল বৃষ্টি হয়নি। ফলে শেরপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যায় পরিস্থিতির উন্নতির হার অপেক্ষাকৃত কম। ত্রাণ তৎপরতা চলছে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্য সংকট রয়েছে। এদিকে রবিবার রাতে বন্যার পানিতে ডুবে নকলা উপজেলার গণপদ্দি ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক (৫০) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটজনে।
জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমেছে। ফলে গতকাল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ওই সব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম থেকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চলে নেমে যাচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীসহ জেলায় প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আমন আবাদ, ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি ও ২ হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে ২ লাখ কৃষক। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেহাল গ্রামীণ সড়কের চিত্রসহ নানা ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার ঝিনাইগাতী-ফাকরাবাদ সড়কের বিভিন্ন অংশ ঢলের পানিতে ভেঙে যাওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার সদরের মো. জাহিদুল হক বলেন, এখনো দুর্গম এলাকায় মানুষের খাদ্যসংকট আছে। তবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকার পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান গতকাল বিকালে জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত সব এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কাজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সার্বিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ও সহযোগিতা করছেন। পুলিশ, রাজনৈতিক দল, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন।
ময়মনসিংহ : বৃষ্টি না থাকায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। হালুয়াঘাটের পাঁচটি ইউনিয়ন ও ধোবাউড়ার তিনটি ইউনিয়নের পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নেতাই নদীতে পানি কমেছে ১৭৮ সেন্টিমিটার। পানি কিছুটা কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি এখনো। জানা যায়, উজানে পানি কমতে থাকলেও এখনো পানি বাড়ছে ভাটি এলাকাগুলোতে। সেই সব ঘরে পানি বাড়ায় অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু ঘরগুলোতে। এই মুহূর্তে সবাই ভুগছেন খাবারের কষ্টে।
এদিকে ফুলপুরে একটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও আরেকটি ইউনিয়নে প্লাবিত হয়েছে। মালিঝি ও কংস নদ দিয়ে পানি ফুলপুরে প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে। ১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন এ উপজেলায়। জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় নিমজ্জিত ধান ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর ও সবজি ৬০ হেক্টর। হালুয়াঘাটে নিমজ্জিত ধান ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর ও সবজি ৭৫ হেক্টর। ফুলপুরে নিমজ্জিত ধান ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর ও সবজি ৬২ হেক্টর। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৭ হাজার ৮০ জন মৎস্যচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।