চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে খুঁটিতে বেঁধে শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবককে গান গাইতে গাইতে পিটিয়ে হত্যার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ১৩ আগস্ট ঘটনাটি ঘটলেও কয়েকদিন ধরে ভিডিওটি সামনে আসার পর আসামি খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। ওই সময় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহাদাতের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার পাঁচবাড়িয়ায়। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন এবং ফলমন্ডির একটি দোকানে চাকরি করতেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা গেছে, দুই নম্বর গেট এলাকার আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে দুটি স্টিলের পাইপে শাহাদাতকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
এ সময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গাইতে গাইতে তাকে মারধর করছে একদল তরুণ। এ সময় কেউ কেউ বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, আবার অনেকে উল্লাস করছিলেন। পরদিন নগরীর প্রবর্তক এলাকা থেকে পুলিশ শাহাদাতের লাশ উদ্ধার করে। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা মো. হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যার দিকে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তাকে ফোন করলে জানান, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে আবারও ফোন করেন শারমিন। তখন তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরীর প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে শাহাদাতের মৃতদেহ পড়ে আছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠায়। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাতের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম পাওয়া গেছে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান জানান, ১৪ আগস্ট প্রবর্তক এলাকা থেকে শাহাদাতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখে শাহাদাতের স্ত্রী মারধরের শিকার ব্যক্তি তার স্বামী বলে নিশ্চিত করেছেন। যারা মারধর করেছেন, তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম নগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সে সময় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম না থাকায় কোনো একটি পক্ষ ওই যুবককে ভুল বুঝিয়ে হয়তো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে। যার কারণে ওই সময়কার পরিস্থিতিতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় সড়কের ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীও এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।