তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট ও সার্ভার শব্দ দুটির সঙ্গে পরিচিত অনেকেই। এ অন্তর্জালের দুনিয়ায় নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রক্ষিত থাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় তথ্য। তথ্যচোরের দল এ জগতে চুরির সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। সিস্টেমে নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে পেলেই তারা প্রাযুক্তিক হামলা চালায়। হাতিয়ে নেয় তথ্য। তারপর সেটি ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে, নানা সুবিধা ভোগ করে। এ কাজটিকে বলা হয় হ্যাকিং, করেন হ্যাকাররা। তরুণ প্রযুক্তিবিদদের কাছে হ্যাকিং বিষয়টি রোমাঞ্চকর ও কৌতূহল জাগানো। এদের অনেকেই জানে না হ্যাকিং ক্ষেত্রবিশেষে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অননুমোদিত হ্যাকিং সাইবারক্রাইম হিসেবেই বিবেচিত বিশ্বজুড়ে-
যেভাবে হ্যাকিং করা হয়
যারা হ্যাকিং করেন তাদের বলা হয় হ্যাকার। হ্যাকাররা কম্পিউটার-সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থায় বৈধ বা অবৈধ অনুপ্রবেশ করে থাকেন।
এ ব্যবস্থা থেকে তারা নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করে যেমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করে থাকে তেমনি চাইলে অবৈধভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ব্যক্তিস্বার্থ ভোগ করতে পারেন। কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে ভালো জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরাই এ ধরনের কাজ করে থাকেন। বায়োস চিপের মাধ্যমে হ্যাকিং করা হয়। বায়োস চিপ একটি কম্পিউটারের মাদারবোর্ডে ফার্মওয়্যার। এতে থাকে মাইক্রোচিপ। বায়োস কম্পিউটার বুট করে এবং অপারেটিং সিস্টেম লোড করতে সাহায্য করে। এটি মূল সফটওয়্যারে ঢুকে সংক্রমণ করে, যা অ্যান্টিভাইরাস এবং অন্যান্য নিরাপত্তা পণ্যের নিচে পরিচালিত হয়। সাধারণত অ্যান্টিভাইরাস এগুলো স্ক্যান করে না। এতে হ্যাকাররা সহজেই এখানে ম্যালওয়ার দিয়ে দিতে পারে। কখনো ম্যালওয়ার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম মুছে ফেললে বা আবার ইনস্টটল করলেও থেকে যায়। পরবর্তীতে হ্যাকিং আক্রমণ দূর থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে অথবা সিস্টেমে ফিজিক্যাল ইন্টারডিকশনের মাধ্যমে করা যায়। গবেষকরা একে ‘ইনকারশন ভালনারেবিলিটিস’ বলে।
এটিই হ্যাকারকে বায়োসে প্রবেশের অনুমতি দেয়। আর একবার বায়োস আপস করে ফেললে সিস্টেম তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়। এরপর তারা সিস্টেমের সব ধরনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
হ্যাকিংয়ে ব্যাংক লুট
রাশিয়ান হ্যাকারদের ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো লুট : ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো সরিয়ে ফেলে হ্যাকাররা। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ব্যাংক লুটের ঘটনা এটি। ব্রিটিশ ব্যাংক থেকে এ বড় অংকের টাকা লুটে নেয় একদল রাশিয়ান হ্যাকার। কমপক্ষে ১০০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। হ্যাকাররা ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে সিস্টেম ব্যবহার করে। সেখানে ম্যালওয়ার ছড়িয়ে দেয়। এতে করে ব্যাংকের লেনদেন তথ্য ও অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতে পেয়ে যান হ্যাকাররা। ধীরে ধীরে খুব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা টাকা সরাতে শুরু করেন। সবার অলক্ষ্যে এ বিপুল পরিমাণ টাকা তারা বৈধ লেনদেনের আদলেই লুটে নেন। আতঙ্কের কথা ৬৫০ মিলিয়ন ইউরো বলা হলেও আসলে সেটি ঠিক কি না বলা কঠিন। কারণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো সত্যিকারের অংকটি প্রকাশ করেনি। ব্যাংকের লেনদেনবিষয়ক সিস্টেম যাচাইবাছাই করে জানা যায়, একটি ই-মেইলের মাধ্যমে ম্যালওয়ারটি তাদের সিস্টেমে ঢুকে পড়ে। তারপর সেটি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠাতে শুরু করে। হ্যাকাররা সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ এমনভাবে নিয়েছিল, যাতে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পর্যায়েও সেটি ধরা পড়েনি। তারা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনগুলো অন্তত চার মাস ধরে চলেছিল।
এ তো গেল ব্যাংক। এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনারও বহু উদাহরণ রয়েছে। তেমনই এক ঘটনা ঘটে ‘গ্লোবাল পেম্যান্টস ইনকরপোরেশন’-এ।
‘গ্লোবাল পেম্যান্টস ইনকরপোরেশন’-এর এটিএম জালিয়াতি : আটলান্টার এ প্রতিষ্ঠানটি ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায় হ্যাকারদের কবলে পড়ে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ ঘটনাটি ঘটে। ভিসা, মাস্টার কার্ড তাদের সতর্ক করে দেয় এই বলে যে, তাদের প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ডের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ২০১১ সালে এ নিয়ে বেশ কয়েকটি কনফারেন্সও হয়। তাদের প্রতিষ্ঠানটি নির্ভরযোগ্য বলে প্রতীয়মান হলে সে সময় আর মাথা ঘামানো হয়নি। অবশ্য মূল ঘটনাটি ঘটে কয়েক মাস পর। তাদের কিছু কিছু ব্রাঞ্চ অভিযোগ করে, তাদের লেনদেনগুলো স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। ভিসা, মাস্টার কার্ড জালিয়াতি চক্রের খপ্পরে পড়েছে তারা। অবৈধ ও অস্বাভাবিক লেনদেনবিষয়ক নিরাপত্তা জোরদার করে তারা। তবে এ পূর্ব প্রস্তুতি যথেষ্ট ছিল না। হ্যাকাররা তাদের সিস্টেমে প্রবেশ করে তছনছ করে দেয় সবকিছু। শুরুতে ১.৫ মিলিয়ন ডলার হাতছাড়া হওয়ার কথা জানা গেলেও শেষে জানা গেল অংকটি ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ অংকটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অবশ্য পরিশেষে বলে ৩৬ মিলিয়ন ডলার সেখানে ফাইন ও তদন্তের জন্য আরও ৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল তারা।
হ্যাকিং ও হ্যাকার
হ্যাকিং শব্দটি প্রযুক্তিবিদদের কাছে বেশ পরিচিত। তরুণরা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার খোঁজে হ্যাকিং শুরু করে। শুরুতে শখের বশে, পরে কেউ কেউ পেশাদার হয়ে ওঠেন। হ্যাকিং এবং হ্যাকার শব্দ দুটি তাই কিশোরদের আকৃষ্ট করে। হ্যাকিং মূলত একটি পদ্ধতি, যা মেনে কেউ বৈধ অনুমতি ছাড়া কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ঢুকে থাকে। যারা এ হ্যাকিং করে তাদের বলা হয় হ্যাকার। হ্যাকিং অনেক ধরনের হতে পারে। আমাদের মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, গাড়ি ট্র্যাকিং, বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও ডিজিটাল যন্ত্র বৈধ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে সেটিকেও হ্যাকিং বলা যায়। হ্যাকাররা সাধারণত এসব ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের ত্রুটি বের করে তা দিয়েই হ্যাক করেন। হ্যাকিংয়ের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। তার ওপরই নির্ভর করে হ্যাকিং ঠিক কতখানি সাইবারক্রাইম।
হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার
হ্যাকিং শব্দটি মাথায় এলে অনেকেই ভেবে বসেন এটি পুরোপুরি অননুমোদিত কাজ। অথচ হ্যাকারদের একটি দল রয়েছে, যারা হ্যাকিং করেন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটিং ব্যবস্থা আরও নিরাপদ ও নিখুঁত করতে। তারা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সিস্টেমের নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করে সেটি ঠিক করে দেন। এটি হতে পারে একটি কম্পিউটার, একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, একটি সার্ভার বা কোনো ওয়েবসাইট। এ হ্যাকারদের বলা হয় হোয়াইট হ্যাক হ্যাকার।
গ্রে হ্যাট হ্যাকার
ভালো ও মন্দের মাঝামাঝি জায়গাটি গ্রে হ্যাট হ্যাকারদের। বিশ্বে গ্রে হ্যাট হ্যাকারের সংখ্যাই বেশি। এরা বেশিরভাগ সময়ই হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের মতো কাজ করে থাকেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এরা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে নিজে বা ভাড়ায় আক্রমণ করে বসেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নেটওয়ার্কে। এরা অনেকটা ভবঘুরের মতো অন্তর্জালের দুনিয়া ঘুরে বেড়ান। নিজ মনমতো কাজ করে। এরা কখনো সিকিউরিটি সিস্টেমের মালিককে ত্রুটি জানিয়ে সাহায্য করে, কখনো করে ক্ষতি।
ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার
হ্যাকিং শব্দটির মূল আতঙ্ক তারাই। বছরের পর বছর ধরে হ্যাকিং শব্দটিতে আতঙ্ক মিশিয়েছে এরা। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকাররা সবচেয়ে দুর্ধর্ষ হ্যাকার হয়ে থাকে। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি ছোট-বড় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেউই। তারা কোনো সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটি খুঁজে পেলে দ্রুত সেটি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে। কখনো পুরো সিস্টেম নষ্ট করে দেয় বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে। এরা এমন ব্যবস্থা করে রাখতে সক্ষম যেন ভবিষ্যতে আবার সেই সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
কেন হ্যাকিং করা হয়
ওয়েব দুনিয়ায় হ্যাক অনেকটা সাধারণ ব্যাপার। নানা কারণেই হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে ওয়েবসাইট। মূলত বড় ওয়েবসাইটগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে অথবা কাস্টমার ডিটেইলস চুরি করার জন্য হ্যাক করা হয়। আবার অনেক সময় ছোট এবং সাধারণ ওয়েব ব্লগও হ্যাক করা হয়।
কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ পেতে
অনেক হ্যাকার ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য কেবল সাইট হ্যাক করে না। অনেক ক্ষেত্রে তারা ওয়েবসাইট সার্ভার বা সার্ভার কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্যও হ্যাকিং করে থাকে। যেহেতু ওয়েব সার্ভার সাধারণ কম্পিউটারের মতোই হয়ে থাকে, তাই এতে যে কোনো টাস্ক পারফর্ম করানো সম্ভব। তবে হ্যাকার বিশেষ করে ডিজিটাল কারেন্সি মাইনিং করার জন্য কম্পিউটার পাওয়ার ব্যবহার করে। যেমন- বিটকয়েন বা যে কোনো ক্রিপটোকারেন্সি মাইনিং করার জন্য।
ফ্রি অ্যাডভারটাইজমেন্ট
হ্যাকার কোনো ওয়েবসাইট হ্যাক করে হোম পেজে নিজেদের ছবি বা গ্রুপের ছবি ঝুলিয়ে দেয়। এদের প্রধান উদ্দেশ্য হয় বিশেষ করে নিজের নাম বা হ্যাকিং গ্রুপের নামের প্রসার বিস্তার করানো। তারা দেখাতে চায়, ওই নামের কোনো একটি হ্যাকিং গ্রুপ রয়েছে। এর বড় সুবিধা হলো- ফ্রিতে নিজের বা গ্রুপের অ্যাডভারটাইজমেন্ট করানো।
ফিশিং পেজ ব্যবহার করতে
হয়তো ওয়েবসাইটে কোনো ইউজার ডাটা নেই, কিন্তু হ্যাকার সাইটটি হ্যাক করে ফেক পেজ ঝুলিয়ে দিতে পারে। যা হতে পারে ফেসবুক বা গুগল পেজের কপি ভার্সন। ইউজার বেশির ভাগ সময় এ রকম পেজ দেখে বোকা সেজে যায়, আর আসল সাইট মনে করে নিজের ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড প্রবেশ করিয়ে দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গে লগইন নেম আর পাসওয়ার্ড বা যে কোনো প্রবেশ করানো তথ্য যেমন ক্রেডিট কার্ড ডিটেইলস হ্যাকারের কাছে চলে যায়।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
এসইও মানে হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এ টাইপের অ্যাটাককে এসইও অ্যাটাক বলতে পারেন। সার্চ ইঞ্জিন থেকে হ্যাকার নিজের ওয়েবসাইটে র্যাংক করার জন্য ওয়েবসাইট হ্যাক করে থাকে। সেখানে স্প্যাম পেজ তৈরি করে তার সাইটের জন্য ব্যাকলিঙ্ক বসিয়ে দেয়। সাধারণত গুগল বা সার্চ ইঞ্জিনগুলো সেই সাইটগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে যাদের ব্যাকলিঙ্ক সবচেয়ে বেশি।
স্প্যামিং মেইল সেন্ড করতে
অনেক সময় স্প্যাম মেইল সেন্ড করার জন্য ওয়েবসাইটগুলোকে র্যান্ডমলি হ্যাক করা হয়। তারপরে সাইট থেকে একসঙ্গে হাজারও বা লাখো মেইল সেন্ড করা হয়, অনেক সময় তো সাইট মালিক কিছুই বুঝতে পারে না। এদিকে হ্যাকার তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।
ম্যালওয়্যার ছড়াতে
হ্যাকার ওয়েবসাইট হ্যাক করে সেখানে ম্যালিসিয়াস কোড বা ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার ইনজেক্ট করিয়ে দেয়। তারপরে ওই ওয়েবসাইটে যখন কোনো ভিজিটর ভিজিট করে এবং তার পিসিতে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, সেই ম্যালওয়্যারটি ভিজিটরের কম্পিউটারে প্রবেশ করে। এবার ওই ম্যালওয়্যারগুলো অগণিত উপায়ে হ্যাকারকে টাকা ইনকাম করার সুযোগ করে দেয়।
হ্যাকিং
ভয়ংকর সাইবারক্রাইম
তথ্য চুরি, গোপন তথ্য ফাঁস, ই-মেইলের পাসওয়ার্ড হ্যাক করা, সার্ভার কিংবা ওয়েবসাইটকে পুরোপুরি গায়েব করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক বছর ধরেই। ই-পর্নোগ্রাফি, যৌন হয়রানির ব্যাপকতাও বেড়েছে। তেমনই কয়েকটি ঘটনা-
ই-মেইল হ্যাকিং : ই-মেইল হ্যাকিং অনেকের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জি-মেইলের মতো ফ্রি ই-মেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আক্রমণ হয়েছে হ্যাকারদের দিয়ে। ২০১১ সালে হাজার হাজার জি-মেইল ব্যবহারকারীর ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড প্রকাশ করে দিয়েছে হ্যাকারদের একটি দল।
উইকিলিকস : উইকিলিকস ওয়েবসাইট। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা তথ্যের বিশ্ব কাঁপানো ওয়েবসাইট। এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে মার্কিন সরকারের গোপন দলিল ফাঁস করে দেওয়ার জন্য। তথ্য গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
পেপাল : পেপাল অর্থ বিনিময়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। অনেকের আস্থাভাজন এ প্রতিষ্ঠানটিও হ্যাকারদের আক্রমণের মুখে পড়ে। আমেরিকাকে সহায়তার অভিযোগে হ্যাকাররা কিছু সময়ের জন্য এর সেবা বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম হয়।
সনি প্লে স্টেশন : ২০১১ সালের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় ছিল বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি সনি প্লে স্টেশন সার্ভার হ্যাক হওয়া। এতে করে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানির প্রতি মানুষের আস্থা কমতে থাকে।
এফবিআইর ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছিল ১৬ বছরের কিশোরের হাতে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিল ১৬ বছরের এক কিশোর। সিআইএ পরিচালক জন ব্রেনানসহ শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কর্মকর্তাদের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করে বসে এ কিশোর। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতারের দাবি করে এফবিআই এবং ব্রিটিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। তাদের দাবি, মার্কিন কর্মকর্তাদের ‘নাস্তানাবুদ’ করে ছাড়া ওই হ্যাকার আদতে ১৬ বছর বয়সের এক কিশোর। ‘ক্র্যাকা’ নামে পরিচিত ওই কিশোর হ্যাকারকে ইংল্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২০ হাজার এফবিআই আর ৯ হাজার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্মীর ডেটা অনলাইনে ফাঁস করায় ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়।
কুখ্যাত যত হ্যাকার
কেভিন লি পোলসেন : আশির দশকে কুখ্যাত হ্যাকার ছিলেন মার্কিন সাংবাদিক কেভিন লি পোলসেন। তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন টেলিফোন লাইন হ্যাক করার জন্য। পোলসেন ১৯৯১ সালে ধরা পড়েন। সাইবার ক্রাইম, কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধ, স্মাগলিং বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হন পোলসেন। চার বছর জেল খাটেন তিনি।
রবার্ট তপ্পন মরিস : ১৯৮৮ সালের ২ নভেম্বর রবার্ট মরিস তৈরি করেন কম্পিউটার ওরম। এটিই প্রথম ভাইরাস, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে বিভিন্ন মূল্যবান তথ্যকে নষ্ট করত। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি নামে এক বেসরকারি রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশ করেন মরিস ভাইরাস। তার এ ওরম দুর্বল পাসওয়ার্ড নষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়।
মাইকেল কেলস : মাইকেল কেলস হলেন ইন্টারনেট দুনিয়ার ‘মাফিয়া বয়’। কিউবেকের এ মাফিয়া বয় মাত্র হাইস্কুল পাস করে ইয়াহু, আমাজন, ডেল, ইবে, সিএনএন-এর মতো বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিকে নাচিয়ে ছাড়েন। ২০০০ সালে মাইকেল কেলস তৈরি করেন, যা বড় কমার্শিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক করার ক্ষমতা রাখে। তিনি ১ ঘণ্টার জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুকে হ্যাক করেন। ২০০১ সালে মনট্রিয়েল ইয়থ কোর্ট আট মাসের জন্য মাইকেলকে নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দেন ও ইন্টারনেট ব্যবহার না করার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
ডেভিড স্মিথ : ম্যালিসা ম্যাক্রো ভাইরাস তৈরি করে বেশ নাম করেছিলেন। তার তৈরি ভাইরাসের বিশেষত্ব হলো আউটলুকের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মূল্যবান ফাইলগুলোকে নষ্ট করা। মাইক্রোসফট, ইনটেল, লুসেন্ট কম্পানিরা ই-মেইল গেটওয়েতে ম্যালিসা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে।
কিন্তু ব্যর্থ হয় তারা। উত্তর আমেরিকায় বড় বড় কোম্পানির কম্পিউটারে ম্যালিসা ভাইরাস আক্রমণে ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় তাদের।
অ্যান্ড্রিয়ান লামো : ছদ্মনাম ‘দ্য হোমলেস হ্যাকার’। ২০০৩ সালে অ্যাড্রিয়ান লামো খবরের শিরোনামে উঠে আসে মাইক্রোসফট, ইয়াহু, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, এমসিআই ওয়ার্ল্ডকমের হাইপ্রোফাইল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ভাঙার কারণে। টাইমস অভিযোগ দায়ের করলে লামোর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
জর্জ হটজ : জর্জ হটজ হলেন প্রথম ব্যক্তি আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ব্রেক করেছিলেন। ২০০৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ভেঙে চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। এ ছাড়াও তিনি ডেভেলপ করেন আইফোন অপারেটিং সিস্টেম নষ্ট করার জন্য জেলব্রেক টুল ও বুট্র–ম। সোনি প্লে স্টেশন থ্রি ব্রেক করার পর সনির সঙ্গে তুমুল আইনি লড়াই চলে। প্লে স্টেশন নেটওয়ার্ক হ্যাক করে ৭৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করে জর্জ হটজের হ্যাকার গ্রুপ।
জনাথন জেমস : ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের কেন মানুষ আতংকের চোখে দেখে তার উদাহরণ হতে পারে জনাথন জেমস। তখন তার বয়স মাত্র ১৫। কিশোর বয়সেই জড়িয়ে পড়েন হ্যাকিংয়ে। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার হয়ে ওঠেন। নাসা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থার সিস্টেম হ্যাক করে রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করেন। সে বয়সেই সে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সফটওয়্যার চুরি করেছিলেন। তাকে পরবর্তীতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তিনি সাইবারক্রাইম অপরাধে জেল খাটেন। ২০০৮ সালে জেমস আত্মহত্যা করেন এবং সুইসাইট নোটে লিখে যান- ‘বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার বিশ্বাস নেই, যা হোক আজকের আমার কাজ ও চিঠি জনগণের কাছে এ বার্তা পৌঁছাবে আমি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের বাইরে আর এখান থেকে বেরিয়ে আসার এটাই একমাত্র পথ...’