পানি সঙ্কটে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে একমাত্র সরকারি মৎস্যবীজ (রেণু) উৎপাদন খামারটিতে রেণু উৎপাদন বন্ধ প্রায় দুই যুগ ধরে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় মৎস্যচাষীরা। অন্যদিকে দীর্ঘ দিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থে নির্মিত অবকাঠামোসহ যন্ত্রাংশ। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি অর্থ নষ্ট হলেও দেখার যেন কেউই নেই। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনবল সঙ্কটসহ নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, মেরামতের জন্য চেষ্টা চলছে।
মাছের জেলা পাহাড় হাওরের নেত্রকোনা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে সুসং রাজার দুর্গাপুরে (১৯৬০) প্রায় ৬ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় মৎস্যবীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি। এ অঞ্চলের চাষীদের সুবিধার্তে ১৯৮০ সাল থেকে পাঁচটি হ্যাচারিতে বিভিন্ন মাছের রেণু উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে বর্তমান দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সড়কের পাশের ওই মৎস্যবীজ হ্যাচারিতে পানি সংকট দেখা দিলে এক পর্যায়ে ২০০০ সালে পুরোপুরিভাবে রেণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে অবকাঠোমোসহ যন্ত্রাংশ।
এদিকে মৎস্য চাষীদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রেণু আনায় খরচসহ নষ্ট হওয়ায় নতুন চাষী সৃষ্টি না হয়ে দিনে দিনে আগ্রহ হারিয়ে কমতে থাকে মৎস্য চাষীর সংখ্যা। বর্তমানে ৪ হাজার ৪৯২টি পুকুরসহ জলাশয়ে মাত্র ২ হাজার ২৬৫ জন মৎস্য চাষী রয়েছেন। কোন রকমে তারা ধরে রেখেছেন তাদের পেশা। এদিকে অকেজো অবস্থায় দুই যুগ ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে হ্যাচারির যন্ত্রাংশসহ অবকাঠামো।
খামারি স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, ময়মনসিংহ গৌরিপুর থেকে রেণু আনতে হয়। যে কারণে লাভের অংশ চলে যায়। তাই পুকুর কমিয়ে ফেলেছেন তিনি।
দুর্গাপুর খামার ব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, ষাটের দশকে ৫ টি পুকুর নিয়ে খামারটি হয়। এরপর আশির দশকে অবকাঠামো তৈরী হয়। তখন থেকে কৃত্তিমভাবে রেণু উৎপাদন হতো। ধীরে ধীরে পানির লেয়ার নীচে নামতে থাকায় ডিপ টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই অবকাঠামোও নষ্ট হচ্ছে। আমরা এখানে শুধু পোনা এবং পরামর্শ দিচ্ছি। কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। এটি পুনরুদ্ধার হলে এই অঞ্চলের বড় একটি আয়ের খাত হবে।
নেত্রকোনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তএ এস এম রাসেল জেলার দুইটি সরকারি মৎস্যবীজ খামারের মধ্যে দুর্গাপুরের খামারটির জরাজীর্ণ অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, রেণু উৎপাদনের অবকাঠামোসহ যন্ত্রাংশটি নষ্ট হচ্ছে। তবে স্থানীয় মৎস্য চাষীদের সুবিধার জন্য দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন