শিরোনাম
বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রিন্ট মিডিয়ার অমরত্বের প্রতীক

সৈয়দ বোরহান কবীর. নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

প্রিন্ট মিডিয়ার অমরত্বের প্রতীক

২০২১ সালের এক সকালে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক বন্ধু নঈম নিজামের ফোন। অনেকটাই ধমকের স্বরে বললেন ‘তোমাকে নিয়মিত লিখতে হবে। অন্য যা-ই কর, লেখালেখিটা কোরো। এটাই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।’ বন্ধুর আদেশ শিরোধার্য। সেই থেকে প্রতি শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে উপসম্পাদকীয় লিখছি। এটা লিখতে গিয়ে গত দুই বছরের বেশি সময়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের জনপ্রিয়তা ও সামর্থ্যরে একটা পরিচয় পেয়েছি। এখানে লিখতে গিয়েই বুঝেছি ছাপা পত্রিকার কী অফুরান শক্তি!  নিয়মিত লেখার সূত্র ধরেই ছাপা সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ উপলব্ধির চেষ্টা করেছি।
২০১০ সাল থেকেই বিশ্বে ছাপা পত্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। প্রিন্ট মিডিয়ার দিন কি শেষ হয়ে এলো?  এ প্রশ্ন অনেকের মধ্যে। এ সময় থেকেই বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকে। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব মূলধারার গণমাধ্যমকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। ব্যস্ত জীবনে ছাপা সংবাদপত্র পড়ার চেয়ে অনলাইনে ঝুঁকে পড়েন পাঠক। একটি খবরের জন্য পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কে করবে। তার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইনে চোখ রাখলেই হয়। চটজলদি টাটকা খবর পাওয়া যায়। ফলে গোটা বিশ্বেই ছাপা সংবাদপত্র একটা হুমকির মধ্যে পড়ে। দ্রুত প্রচার সংখ্যা কমতে থাকে ছাপা কাগজের। টিকে থাকতে বিশ্বের সব শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমই শুরু করে অনলাইন সংস্করণ। বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র তাদের ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে দেয়। পুরোপুরি অনলাইন হয়ে যায়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বলে কথা। প্রিন্ট মিডিয়ার সংকট আরও তীব্র হয় ২০২০ সালে। যখন সারা বিশ্বে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। দেশে দেশে শুরু হয় লকডাউন। এ সময়ে ভয়ে আতঙ্কে অনেকে বাড়িতে সংবাদপত্র রাখা বন্ধ করে দেন। পুরনো প্রশ্ন আবার নতুন করে সামনে আসে। ছাপা সংবাদপত্রের মৃত্যুঘণ্টা কি তাহলে বেজেই গেল?
কিন্তু না, ছাপা কাগজের মৃত্যু হয়নি। বরং আরও শক্তিশালী হয়ে ছাপা সংবাদপত্র ফিরে এসেছে বিশ্বে এবং বাংলাদেশে। বিশ্বে প্রিন্ট মিডিয়া টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে গণমাধ্যমগুলো। এসব পত্রিকা সংবাদ পরিবেশনে কৌশল, বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনা ভঙ্গিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। বিভিন্ন দেশে ছাপা সংবাদপত্রের বিষয়বস্তু ও সংবাদ পরিবেশনে বৈচিত্র্য আনা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধারায় নেতৃত্ব দেয় ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। জাপানে ‘আসাহি শিম্বুন’, ভারতের ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’, বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’। সোশ্যাল মিডিয়ার বিপ্লবের যুগেও এ পত্রিকাগুলো জনপ্রিয়, উজ্জ্বল। এসব পত্রিকার ছাপা সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে। এসব সংবাদপত্রকে বলা যায় পথপ্রদর্শক। এদের নেতৃত্বে ছাপা কাগজ তার অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছে। প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে কিছু বিষয়ে চলচ্চিত্রের তুলনা করা যায়। যখন টেলিভিশনের বিপ্লব শুরু হলো, তখন কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করেছিল টেলিভিশন কি তাহলে চলচ্চিত্রের মৃত্যু ঘটাবে? সুইচ টিপলেই যখন খবর, বিনোদন, ফ্যাশন সব একসঙ্গে পাওয়া যায় তখন মানুষ কেন হলে গিয়ে সিনেমা দেখবে। কিন্তু সিনেমা তার আপন পথ তৈরি করে নিয়েছে। সিনেমা এখন সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বরং সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটে টেলিভিশন এখন কোণঠাসা। ছাপা সংবাদপত্রও চলচ্চিত্রের মতোই তার আপন পথ করে নিয়েছে। এটা ঠিক যে, এখন ছাপা সংবাদপত্র অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। বিপুল বিনিয়োগ করলেই একটি সংবাদপত্র জনপ্রিয় এবং পাঠকপ্রিয় হয় না। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর বিপুল আয়োজন করে বেশ কিছু সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এসবের অধিকাংশই পাঠকপ্রিয়তা পায়নি। আবার প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রচার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কেন, কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই ছাপা সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। প্রকাশনার ১৩ বছরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। এমনকি করোনাকালে যখন ছাপা কাগজ পড়ার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আড়ষ্টতা তৈরি হয়েছিল, তখনো বাংলাদেশ প্রতিদিন তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এর কারণ একাধিক।
প্রথম এবং সবচেয়ে বড় কারণ হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। যে কোনো পাঠকই বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পড়তে চান। গুজব, কল্পিত, চিত্রাকর্ষক, চটকদার সংবাদ সাময়িকভাবে পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারে বটে, কিন্তু যখনই একজন পাঠক বুঝতে পারেন পরিবেশিত সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ নয়, স্রেফ চমক; তখন তিনি এ সংবাদপত্রের ওপর আস্থা হারান। পয়সা দিয়ে ওই পত্রিকা আর কেনেন না। গত ১৩ বছরে বিশ্বাসযোগ্যতায় বাংলাদেশ প্রতিদিন এক অনন্য স্থান দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপত্র নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশে এবং বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপ্লব হয়েছে বটে। কিন্তু মানুষ ফেসবুক বা অনলাইনের খবরে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারে না। এই তো কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে মেরে ফেলল সোশ্যাল মিডিয়া। শুধু ‘মৃত’ বানিয়ে ক্ষান্ত হলো না, তাঁর জানাজাও দিয়ে দিল! আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মাহাথির মোহাম্মদও কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে ‘মৃত্যুবরণ’ করেছিলেন। ভাইরাল হওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এভাবে আজগুবি, অসত্য সংবাদ ছড়িয়ে দেয়। মানুষ চট করে তাই এসব বিশ্বাস করে না। বিশ্বাসের জায়গা হলো ছাপা সংবাদপত্র। বাংলাদেশ প্রতিদিন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাপা সংবাদপত্রের বাঁক বদলের এক নাম। বাংলাদেশের সংবাদপত্র নানান বাঁক বদল করে আজকের জায়গায় এসেছে। স্বাধীনতার আগে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ধারা বদলে দিয়েছিল। সংবাদপত্র কেবল এলিট ও উচ্চ শ্রেণির প্রতীক নয়। সংবাদপত্র দ্রোহ, মুক্তি এবং প্রতিবাদের ভাষাও বটে। এটি ছিল ইত্তেফাকের বৈশিষ্ট্য। ইত্তেফাক এ অঞ্চলে প্রথম আমজনতার পত্রিকা। একটা সময় এ দেশের স্বাধিকার ও মুক্তির আন্দোলন আর ইত্তেফাক এক বিন্দুতে মিলিত হয়। বাঙালির কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছিল এ সংবাদপত্রটি। ইত্তেফাকের জনপ্রিয়তা এতই বেড়েছিল যে, পত্রিকাটি সংবাদপত্রের সমার্থক হয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ পত্রিকাকে ইত্তেফাক বলেই ডাকত। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের দ্বিতীয় বাঁক বদল হয় নব্বইয়ের দশকে। আজকের কাগজের মাধ্যমে। এ সময় একঝাঁক মেধাবী তরুণের সৃষ্টিশীলতায় আজকের কাগজের মাধ্যমে সংবাদপত্রে শুরু হয় নতুনের জয়ধ্বনি। সংবাদ পরিবেশনা ভঙ্গিতে আসে পরিবর্তন। তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি মতামত প্রাধান্য পায়। সংবাদ উপস্থাপনায়ও আসে আধুনিক রীতি।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রের তৃতীয় বাঁক পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাত ধরে। আমার বিবেচনায় বাংলাদেশ প্রতিদিন এখন একমাত্র পূর্ণাঙ্গ, পরিপূর্ণ সংবাদপত্র। ১২ পৃষ্ঠার ঠাসা বুননে এ সংবাদপত্রে সব খবর থাকে। বাংলাদেশ প্রতিদিন তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন সত্যনিষ্ঠ, অন্যদিকে তথ্য পরিবেশনে মুক্ত, পক্ষপাতহীন। সবার খবর ঠাঁই পায় সর্বাধিক জনপ্রিয় এ দৈনিকে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের আরেকটি বিষয় পাঠককে আকৃষ্ট করে, তা হলো তথ্যের সঙ্গে নিজস্ব মতামত পাঠকের ওপর চাপিয়ে দেয় না। তথ্যের সঙ্গে মন্তব্য মিশিয়ে তথ্যকে বিকৃত করে না।
বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আজ বিপন্ন। সংবাদপত্রসংশ্লিষ্ট সবাই জানেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হলো গণমাধ্যমের প্রাণ। না প্রিন্ট মিডিয়া, না ইলেকট্রনিক মিডিয়া- কোথাও পরিপূর্ণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না। এ ক্ষেত্রে অনন্য, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশ প্রতিদিনই এখনো এ দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাঁচিয়ে রেখেছে। পাঠকের অনুসন্ধিৎসু তৃষ্ণা মেটাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনই একমাত্র ভরসা। ষাটের দশকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে অন্যতম জনপ্রিয় বিষয় হয়ে ওঠে উপসম্পাদকীয়। বরেণ্য সাংবাদিকরা বিভিন্ন সংবাদপত্রে কলাম লিখতেন। এ কলাম নিয়ে চর্চা হতো দিনভর। রাজনৈতিক পাড়ায়, অফিসে, আদালতে চলত কলামের পক্ষে-বিপক্ষে নানান আলোচনা, বিশ্লেষণ।  তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আখতার উল আলম, ফয়েজ আহমদ, নির্মল সেন, আবেদ খান, সন্তোষ গুপ্তের একেকটি কলাম ছিল একেকটি রাজনৈতিক চিন্তার প্রকাশ। ইত্তেফাকে ‘স্থান-কাল-পাত্র’ লিখতেন ‘লুব্ধক’।  সংবাদে ‘গাছ পাথর’ নামে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখতেন ‘সময় বহিয়া যায়’। ফয়েজ আহমদের‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ ছিল সাড়া জাগানো কলাম। নির্মল সেনের ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ উপসম্পাদকীয়ই এক কিংবদন্তি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলামের ঐতিহ্য ও আবেদন কমতে থাকে। ক্রমে সংবাদপত্রের কলাম হয়ে ওঠে ফরমায়েশি। পাতা ভরানোর জন্য কিছু দায়সারা লেখা ছাপানোর সংস্কৃতি শুরু হয়। বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে যে-যে উপসম্পাদকীয় হারিয়ে গিয়েছিল, তাকে নতুন জীবন দিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রায় সব উপসম্পাদকীয় পাঠকপ্রিয়, জনপ্রিয়। মানুষ গোগ্রাসে লেখাগুলো পড়ে, মন্তব্য করে। নিজের কথাই যদি বলি, ২০২১ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহে লিখছি। শনিবারের দিনটা এখন আমার জীবনে অন্যরকম। সকাল থেকেই পাঠকের খুদে বার্তা আর টেলিফোনে ব্যস্ত সময় কাটে। একটি সংবাদপত্রের কলাম যে এত বিপুল মানুষ পড়তে পারে, তা অবিশ্বাস্য। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অন্যতম আকর্ষণ এ কলামগুলো। উপসম্পাদকীয় একটি সংবাদপত্রের আভিজাত্যের প্রতীক। সেই হারানো আভিজাত্য ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ পরিবেশনের কৌশল পরিবর্তন ছিল খুবই জরুরি বিষয়। মানুষ এখন চুম্বক খবর জানতে চায়। ইনিয়েবিনিয়ে ইলাস্টিকের মতো লম্বা সংবাদে পাঠকের অনাগ্রহ। পাঠক চান মেদহীন খবর। এ ধারাটি এনেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন।
১৩ বছরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পে এভাবেই এক নীরব বিপ্লব সংঘটিত করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রমাণ করেছে, একটি ভালো সংবাদপত্রের কখনো মৃত্যু নেই।  নানান ধরনের ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার রঙিন দুনিয়ার মধ্যেও ছাপা পত্রিকা টিকে থাকবে আপন মহিমায়। নিজস্ব স্বকীয়তায়। ফেসবুক, টুইটারের এ যুগেও মৃত্যু ঘটবে না প্রিন্ট মিডিয়ার। বরং এটি আরও বেশি আস্থার জায়গা হবে বস্তুনিষ্ঠ, সত্য সংবাদের জন্য। বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রিন্ট মিডিয়ার অমরত্বের প্রতীক।

সর্বশেষ খবর