উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে টানা ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতাসহ ৮ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবী আদায় না হলে উপচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কর্মসূচির হুশিয়ারী দেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবীতে চলমান আন্দোলনের ২১তম দিন মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। অবস্থান কর্মসূচীর ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে পুলিশের উপ-পরিদর্শক আসন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা তাদের সার্টিফিকেট ও নম্বর ফর্দ সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এ কারনে ছাত্রদের অনুরোধে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রশাসনিক বিভাগের কয়েকটি দপ্তরের কার্যক্রম সিমীত পরিসরে চালু রাখা হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন তারা। শুক্রবার থেকে সাপ্তাহিক এবং নববর্ষ বরন উৎসবের কারণে আপাতত তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি মেনে না নিলে মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূবির হুশিয়ারি দেন তারা।
এর আগে গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার দুইদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এতে সীমাহীন জনদুর্ভোগের সৃস্টি হয়।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের উপাচার্য ‘রাজাকারের বাচ্চা’ কটাক্ষ করেন অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদে এবং ওই মন্তব্য প্রত্যাহার সহ ১০ দফা দাবীতে ২৭ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ২৮ মার্চ থেকে ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। শিক্ষার্থীরা ওই আদেশ অমান্য করে ওইদিনই তার পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। উপাচার্য ২৯ মার্চ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতেও আন্দোলন থেকে সরে আসেননি শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মশাল মিছিল, রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখন, প্রতীকী অনশন, কালো কাপড় মুখে বেঁধে বিক্ষোভ এমনকি প্রতীকী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
গত ৬ এপ্রিল বিভাগীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সার্বিক হাউজে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর উপস্থিতিতে এক সমঝোতা সভা হলেও উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনড় থাকেন শিক্ষার্থীরা। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন ৭ এপ্রিল থেকে কাগজে-কলমে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হলগুলো খুললেও ক্লাশ-পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন তারা।
যদিও এই আন্দোলনের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বর্তমান ট্রেজারার, শিক্ষকদের একটি অংশ এবং স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে বলে বারবার গণমাধ্যমের কাছে দাবি করে আসছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম ইমামুল হক। উপাচার্যের বক্তব্য, তার কারণে যাদের স্বার্থ হাসিল হয় না, তিনি (ভিসি) থাকলে যাদের স্বার্থহানির আশংকা রয়েছে, যারা পরবর্তী ভিসি হওয়ার দৌড়ে আছেন তারাই শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে অর্থ আর বুদ্ধি দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় এসব বিষয় অবহিত বলে জানান উপাচার্য।
তবে উপাচার্যের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে শিক্ষার্থীদের আরেক শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত বলেন, উপাচার্য তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। তার বক্তব্য অনুয়ারী শিক্ষার্থদের বাবা-মা ‘রাজাকার’। এটা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তাই কারোর প্ররোচনায় নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরাই উপাচার্যের পদত্যাগ আন্দোলন করছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত বহস্পতিবার শিক্ষা সচিব বরাবর ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছেন উপাচার্য ইমামুল হক।
এদিকে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতাসহ ৮ দফা দাবিতে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো ৩ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষক সমিতি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের নিচে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া জানান, ৫৮তম সিন্ডিকেট সভার ৯৫২নম্বর আলোচ্যসূচির আলোকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিলসহ ৮ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রভাষকরা চাকুরীর পর ৩ বছর অপেক্ষাকাল শেষ করে চাকুরী স্থায়ীকরণের মাধ্যমে পদ পুনবিন্যাসের জন্য পদোন্নতির আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের ওই আলোচ্যসূচি কার্যকর হওয়ায় ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে গেছে। যারা প্রভাষক থেকে ৩ বছর পর সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পাওয়ার কথা, নতুন নিয়মের কারণে প্রভাষকদের পদোন্নতি পেতে সাড়ে ৫ বছর থেকে ৬ বছর লাগবে। তাই এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনসহ ৮ দফা দাবীতে শিক্ষক সমিতি টানা তৃতীয় দিনের মতো ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী এক-দুইদিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলনে যেতে পারে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা