৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:০৭
চতুর্থ সমাবর্তন ও সুবর্ণজয়ন্তী আজ

রাষ্ট্রপতিকে বরণে প্রস্তুত চুয়েট

সাইদুল ইসলাম, চুয়েট থেকে

রাষ্ট্রপতিকে বরণে প্রস্তুত চুয়েট

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চতুর্থ সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদকে বরণে প্রস্তুত চুয়েট প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে তিনি চুয়েট প্রাঙ্গনে পৌঁছার কথা রয়েছে। একই সাথে দুই দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের মধ্যে শেষ দিন শুক্রবার হবে চুয়েটের সুবর্ণজয়ন্তী-২০১৯। 

সমাবর্তনের পরের দিন শুক্রবার গৌরবের ৫০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে চুয়েটকে ঘিরে নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। তবে দুই দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ৪র্থ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২ হাজার ২৩১ জনকে ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ সিজিপিএধারী ৪ শিক্ষার্থীকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক’ দেওয়া হবে।

চুয়েটের সুবর্ণজয়ন্তীর জমকালো অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজারের উপরে লোকের মিলনমেলা হতে পারে। এ উপলক্ষে আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে নগরে আনন্দ শোভাযাত্রা, সন্ধ্যায় আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাতে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান, চুয়েট ক্যাম্পাসে যাত্রা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান, তারপর চুয়েটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নৈশভোজ, ফায়ারওয়ার্কস, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জেমস ও নগর বাউলের কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে।

রাষ্ট্রপতির আগমনকে ঘিরে চুয়েট ক্যাম্পাস ছাড়াও স্থানীয় এমপি ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ রাউজান উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে চুয়েট ক্যাম্পাস এবং পুরো রাউজানে। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই সড়কপথে চুয়েট যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে রাউজানের হাজার হাজার জনতা হাতে জাতীয় পতাকা এবং রাষ্ট্রপতির ছবি সংবলিত পতাকা নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাবে। রাষ্ট্রপতির এ আগমনকে ঘিরে সড়কটির দু’পাশ থেকে অবৈধ এবং ভ্রাম্যমাণ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান করা হয়েছে। দু’পাশের গাছ, স্থাপনাগুলো সেজেছে নতুন রূপে। গাছ ও স্থাপনাগুলোতে লাগানো হয়েছে গোলাপী-সাদা রঙে। ঝকঝকে তকতকে করা হয়েছে কাপ্তাই সড়কের ৮ কিলোমিটার পথ। বিশেষ করে উরকিরচর, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পাহাড়তলী ইউনিয়নের দু’পাশ পেয়েছে ভিন্নতা। চুয়েট ক্যাম্পাসজুড়ে সাজানো হয়েছে জমকালো আয়োজনে। মূল ফটক, চুয়েটের অভ্যন্তর, ভবন, চত্বর, গাছপালা সেজেছে ভিন্ন আয়োজনে। পথে পথে শোভা পাচ্ছে নানা আলপনা আর কারুকাজ। নানা রঙে রঙিন করে  তোলা হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। বিকেল কিংবা সন্ধ্যা নামলেই বর্ণিল আলোকচ্ছটায় চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে এ ক্যাম্পাসের প্রত্যেক এলাকা।

সমাবর্তনের প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আসিফুল হক বলেন, ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশ নেবেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি অতিথি ও সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৩ হাজার অতিথি উপস্থিত থাকবেন। সমাবর্তনে ডিগ্রি পাওয়া ২ হাজার ২৩১ জনের মধ্যে স্নাতক রয়েছেন ২ হাজার ১৪৮ জন, মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর ৭৯ জন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ২ জন ও পিএইচডি ২ জন। এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গত চার বছরের সর্বোচ্চ সিজিপিএধারী চারজনকে 'বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক' প্রদান করা হবে। এ ছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২ হাজার ১৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট এবং ৮৩ জন পোস্ট-গ্র্যাজুয়েটসহ মোট প্রায় ২ হাজার ২৩১ জন ছাত্রছাত্রীকে সমাবর্তন ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তবে এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সুন্দর ও সুশৃংখলভাবে শেষ করতে নানা প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উপ-কমিটি। রয়েছে প্রশাসনের ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। 

রাউজান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল জব্বার সোহেল বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশনায় সমাবর্তন ও সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে ক্যাম্পাসসহ কাপ্তাই সড়কজুড়ে বর্ণিল রূপে সাজানো হয়েছে। চুয়েটের একাডেমিক ভবন, ক্যাম্পাস এবং অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সাজানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হচ্ছে। সড়কের পাশের গাছগুলোতে সাদা-লাল রংয়ের আলোকচ্ছটা চিরচেনা রূপে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে এক সপ্তাহ ধরে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা সবার নজর কাড়ছে। 

চুয়েট সূত্রে জানা যায়, এবার সমাবর্তন বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের  চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। অন্যদিকে চুয়েটের পথচলার ৫০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে আগামী ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন রেলপথ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।  

জানা যায়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বাংলাদেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার অন্যতম একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। প্রকৌশল শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে ১৯৬৮ সাল হতে যাত্রা শুরু করে অদ্যাবধি শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার অদূরে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন প্রায় ১৭১ একর আয়তনজুড়ে এই ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত। এ প্রতিষ্ঠান হতে ডিগ্রি-প্রাপ্ত অসংখ্য প্রকৌশলী দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে নিয়োজিত রয়েছেন, যাদের নিরলস শ্রম ও নিবেদিত প্রয়াস দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর