ঢাকা মেডিকেল কলেজের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি হলে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ইন্টার্ন চিকিৎসক এএসএম আলী ইমাম তার সহপাঠীদের হাতেই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত ১৪ জানুয়ারি রাতে হলের পুকুরপাড় ও টিভিরুমে এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার আলী ইমাম রাজধানীল চকবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন। একই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আলী ইমাম অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার তাকে ইন্টার্নশীপের রোস্টারের কথা বলে হলের পুকুরপাড়ে ডেকে নেওয়া হয়। তিনি সরল মনে সেখানে যান। কিন্তু সেখানে যাওয়ার এক পর্যায়ে ইমামের উপর হামলা করা হয়। মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাকে রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন আমারই সহপাঠী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ, ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান ও ইশমাম আহমেদ। ঘটনাস্থলেই তিনবার বমি করি। এসময় লাঠিসোটা নিয়ে কে-৭২ ব্যাচের সৈয়দ হাসান ইভেন, শেখ সোহেল, ইবরাহীম হাওলাদার, তানভীর আহমেদ আকাশ ও কে-৭৩ ব্যাচের ফয়সাল ইরতিজা আমাকে মারধর করে। এতে আমার বাম পা ভেঙ্গে যায়। পুরো ঘটনার সময় টিভি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন।
তবে, অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শাহরিয়ার খান বলেন, সেদিন ইন্টার্নের রোস্টার নিয়ে আলী ইমাম আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। সে ইন্টার্ন মেডিসিন দিয়ে শুরু করতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাকে সার্জারিতে দেওয়া হয়েছিলো। সে ভেবেছিলো, সেটা আমরা তাকে দিয়েছি। কিন্তু এতে আমাদের কোনো হাত নেই। এনিয়ে কথা বলতে গিয়ে সে হঠাৎ করে আমার মাথায় বেসবলের ব্যাট দিয়ে আঘাত করে। আমার চিৎকার শুনে অন্যরা উদ্ধার করতে আসে। সেখানে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। আলী ইমাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তিনি এই পরিচয় ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ শাহরিয়ারের।
জানা যায়, মারধরের পর আলী ইমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে নিরাপত্তা শঙ্কায় তিনি একটি বেসরকারী হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এখন তাকে ইন্টার্ন করতে কলেজে না আসার হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল থেকে শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কলেজের একটি সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরে ঢামেক শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর থেকেই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যে তাদের কথা শুনে না তার ওপরই নেমে আসে নির্যাতন। গত ২৯ নভেম্বর কে-৭৬ ব্যাচের রাকিব সায়মনকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকজনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। গত ১২ জানুয়ারি কে-৭২ ব্যাচের ইন্টার্ন শিক্ষার্থী শাওন ও সিফাতকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন। তিনি বলেন, ওই দিন যেটা ঘটেছে সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। শুনেছি, তাদের রোস্টার নিয়ে তাদের ঝামেলা হয়েছিলো। সেটা নিয়েই উভয়পক্ষে ধস্তাধস্তি হয়েছে।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে ১৭ জানুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, কমিটি আরও দশ দিন সময় বাড়িয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী বলেন, যেহেতু তদন্ত চলছে, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
একই ঘটনায় চকবাজার থানায়ও মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আলী ইমাম। মামলায় শাহরিয়ার খান, জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ, ফয়সাল ইরতিজা, শেখ সোহেল, ইশমাম আহমেদ, সৈয়দ হাসান ইভেন, ইব্রাহিম হাওলাদার ও তানভীর আহমেদ আকাশসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
বিষয়টি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৪ জানুয়ারির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ১০ ফেব্রুয়ারী প্রতিবেদন জমা দিবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমাদের দিক থেকে ব্যবস্থা নেবো।
কলেজের হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। এর আগে যদি হয়ে থাকে, সেগুলো নিশ্চয়ই সমাধান করা হয়েছে। আর না হয়ে থাকলে আমরা চেষ্টা করছি, কীভাবে সেগুলো সমাধান করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল