২ মার্চ, ২০২১ ১৬:১৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

বন্ধ ক্যাম্পাসে বেড়েছে চুরি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

বন্ধ ক্যাম্পাসে বেড়েছে চুরি

ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হলের তালা ভেঙে হচ্ছে চুরি। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন। তবে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সাদ্দাম হোসেন হল, শেখ রাসেল হল, জিয়াউর রহমান হল এবং রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে চুরির ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার সাদ্দাম হেসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাহিদ নূর হল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বই নিতে হলে প্রবেশ করে। হলে দেখে তার রুমের (২১৭ নম্বর কক্ষ) তালা ভাঙা। ভেতরে আলমারি ও ট্রাংকের তালা ভাঙা। পরে দেখে তার বই, জামা-কাপড়, দুইটি রাইস কুকার ও প্রয়োজনী জিনিসপত্র চুরি হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষার্থী হলের প্রভোস্ট বরাবর অভিযোগ করে। পরে হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেখতে পারে উত্তর ব্লকের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার গোসলখানার শাওয়ার, বালতি ও মগসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও চুরি হয়েছে।

শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দক্ষিণ ব্লকের ১২০ নম্বর কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক জানান, কক্ষের মূল দরজা সিলগালা করা থাকলেও বেলকনিতে লোহার পাতের গ্রিল কেটে চোর ভেতরে ঢোকে। এরপর লকারের তালা ভেঙে ফ্যান, ব্যাগ, পোশাক ও থালা-বাসনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়।

এর আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে চুরি করতে এসে শাহরিয়ার নাফিস হিমেল (১৪) নামে এক কিশোর আটক হয়। হিমেল ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া এলাকার চরপাড়া গ্রামের ইউসুফ মণ্ডলের ছেলে। আটকের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি ও আনসার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য।

জিজ্ঞাসাবাদে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের নির্মাণ সামগ্রী চুরির কথা স্বীকার করে হিমেল। কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল থেকে সাবমারসিবল পাম্প চুরি ও কিছুদিন আগে একই ভবনের পাশ থেকে দুই ভ্যান টাইলস ও ৮ কার্টন ক্যাবল চুরি করার কথাও স্বীকার করে সে। তবে এসব কাজ সে একা করেনি বলে জানায়। 

সহযোগী গ্যাংদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী তোজামের ভাগ্নে সাব্বির হোসেন, শৈলকুপার সাতগাছীর সাগর আলী, পদমদী গ্রামের জব্বার আলীর ছেলে তরিকুল এবং একই গ্রামের ক্যাম্পাসের ঝালমুড়ি বিক্রেতা জামালসহ রুঞ্জু মিয়া, আকাশ ও সুমনের নাম প্রকাশ করে। দিনের বেলায় ঘাস কাটা ও কাগজ কুড়ানোর নামে অনুসন্ধান করে রাতের বেলায় চুরির এ মালামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের থানা গেট, লালন শাহ ও বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেট দিয়ে বের করতো বলে জানা যায়।

শৈলাকুপায় সাগরের ভাঙ্গারির দোকানে এসব মালপত্র বিক্রি করে বলেও জানায় সে। ওই কিশোরের ভিডিও স্বীকারোক্তির পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই গ্যাংদের কারও বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে, এসব চুরির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং নিরাপত্তা অব্যবস্থাপনা একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ সচেতন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে হলে প্রবেশ করতে গেলে হলের আইডি কার্ড, আবেদনপত্র জমা দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে। আর হলের ভেতর থেকে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটছে।

এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, চুরির ঘটনা তদন্ত করছি। নিরাপত্তাকর্মীরা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চুরি হয়, কার গাফিলতির করণে চুরি হয়েছে তাকে বের করে শোকজ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, হল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে থানায় মামলা করব। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহি করব, কেন দিনের পর দিন চুরির ঘটনা ঘটছে।

এর আগের চুরির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শৈলকুপা অঞ্চলের তিনজনের নাম পেয়েছি। শৈলকুপা থানায় ওই নাম পাঠিয়েছি। তারা আমাদের বলেছেন, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। 

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর