২৪ জুন, ২০২১ ২১:৩৬

ঢাবির বাজেট পাশ, বাজেটের আকার কমলেও বেড়েছে গবেষণাখাতে বরাদ্দ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাবির বাজেট পাশ, বাজেটের আকার কমলেও বেড়েছে গবেষণাখাতে বরাদ্দ

২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৮৩১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকার বাজেট পাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট। বৃহম্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বাষির্ক অধিবেশনে বাজেট পাশ হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন সিনেটের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। 

কত টাকার বাজেট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবছরের বাজেটের আকার ৮৩১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা, যা গত অর্থবছরের প্রায় ৩৭ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা কম। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি দেবে ৬৯৬ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা।

উল্লেখ্য, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যা ছিলো টাকার অঙ্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। এর আগের অর্থবছরে তা ছিলো ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

কোন খাতে কত ব্যয়: বাজেট বরাদ্দের বেশির ভাগ অংশই বয় হবে বেতন, ভাতা ও পেনশন খাতে। এ খাতে ব্যয় হবে ৬১১ কোটি ৮৯ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৭৩.৫৭ ভাগ। এছাড়ও পণ্য ও সেবা বাবদ ১৬৮ কোটি ৮ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা, মূলধন খাতে ২১ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য অনুদান খাতে ১৯ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। 

গবেষণা খাতে কত বরাদ্দ: মোট বাজেট বরাদ্দ কমলেও বেড়েছে গবেষণা খাতের মঞ্জুরি। গত অর্থবছরে ৯ কোটি ৫০ লক্ষা টাকা হলেও এবছরের বরাদ্দ ১১ কোটি টাকা,  যা মোট বরাদ্দের ১.৩২ভাগ। এছাড়াও বাজেটে শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা ১০ কোটি ২০ লক্ষ, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য আড়াই কোটি টাকা, গবেষণাগার সরঞ্জামাদি বাবদ ৬ কোটি ৫ লক্ষ, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ বাবদ ৫ লক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছে। 

শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে ভাবছে ঢাবি
সভার শুরুতে সিনেট অভিভাষণ প্রদান করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, মৌলিক গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাতের উন্নয়ন না ঘটলে বিশ্ব ব্র্যাংকিং-এ আমাদের অবস্থান এগুনো তো দূরের কথা, পিছানো অস্বাভাবিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাস্তবতা বিবেচনায় যৌক্তিকভাবে নির্ধারিত এটা বলা কঠিন। শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ও গুণগত মানের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। তাই বিভাগ/ইনস্টিটিউটসমূহের সক্ষমতা এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চাহিদা, সর্বোপরি, ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসিউরেন্স সেলের সূচক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যা পুনঃনির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিল সম্মানিত ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের নির্দেশনা দিয়েছে।
                                                                             
ধনী-দরিদ্র শিক্ষার্থীভেদে পৃথক ফি নির্ধারণে কোষাধ্যক্ষের প্রস্তাব: বাজেট বক্তৃতায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, দরিদ্রদের প্রদেয় করের টাকায় ধনী পরিবারের সন্তানদের প্রায় বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান করা অযৌক্তিক। ‘এ্যাবিলিট টু পে’(পরিশোধের সক্ষমতা) নীতির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সমস্ত ফি নির্ধারণ করা যেতে পারে। সমাজের বিত্তবান অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষার যুক্তিসঙ্গত ব্যয় বহন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে সরকারের উপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে কমবে।

যা বললেন সিনেট সদস্যরা
বার্ষিক সিনেট অধিবেশনের আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে পরিবহন ও হল ফি মওকুফ, ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আটককৃত শিক্ষার্থীদের জামিনের ব্যাপারে দাবি জানান সিনেট সদস্যরা। এক বছর হল বন্ধ থাকার প্রেক্ষিতে হল ও পরিবহন ফি’র মওকুফের বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রস্তাব দেন রেজিটার্ড গ্রাজুয়েট ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। একই দাবি জানান ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন। ক্যাম্পাস থেকে আটক হওয়া ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ অন্যদের জামিনের ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চান সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। এছাড়াও বন্ধ থাকা অবস্থাতেও হলগুলোতে ‘শিক্ষার্থী ও অছাত্র’দের অবস্থানের বিষয়ে উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দাবি জানান সদস্য অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার। 

অধিবেশনের বাইরে বিক্ষোভ: সিনেটের অধিবেশ চলাকালে নিজেদের অবসর গ্রহণের সময়সীমা ৩০ জুন বহাল রাখা বা চাকুরিকাল ৬৫ বছর করার দাবিতে বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। উল্লেখ্য, গত ২১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সরকারি আইন অনুযায়ী শিক্ষকদের সাথে সাথে কর্মকতা-কর্মচারীদের অবসরের তারিখও ৩০ জুনের পরিবর্তে জন্মতারিখ অনুযায়ী নির্ধারণের সিদ্ধান্ত করা হয়। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত তাদের অবসরের বয়স যেহেতু ৬৫ নির্ধারণ হয়নি, তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৩০ জুনই বহাল রাখা হোক। অথবা অবসরের বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণ করা হোক। 

এই দাবিতে সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন তারা। এসময় তারা নানা ধরনের ব্যানার, প্লে-কার্ড বহন করেন। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর