প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত পাস নম্বরই হলো কাট মার্কস। সহজভাবে বলা যায়, যতজন প্রার্থী পাস করানো হবে, তার শেষ প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বরই কাট মার্কস। প্রতিটি বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরপরই প্রার্থীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয় কাট মার্কস নিয়ে। এর যথেষ্ট কারণও আছে। কারণ প্রার্থী যদি কাট মার্কস সম্পর্কে একটা ধারণা পান, তাহলে তিনি পরবর্তী ধাপের জন্য নিশ্চিন্তে প্রস্তুতি নিতে পারবেন!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ৪৩তম বিসিএস প্রিলির কাট মার্কস নিয়েও এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কাট মার্কস নির্ধারণ সম্পর্কে সরকারি কর্ম কমিশন থেকে দাপ্তরিকভাবে কিছু বলা নেই। অভিজ্ঞরা সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই একটা সম্ভাব্য কাট মার্কস সীমা সম্পর্কে ধারণা দেন।
বিগত বিসিএসে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা ও ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- বিজ্ঞপ্তির শূন্য পদের সংখ্যা, কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের পদ পূরণ, প্রশ্নের মান, নন-ক্যাডারে সুপারিশের সম্ভাবনা, পিএসসির বিশেষ পরিকল্পনা ইত্যাদির ওপর সাধারণত কাট মার্কস নির্ভর করে।
এবার কয়েকটি উদাহরণ ও ধারণা দেওয়া যাক-
১. ৪১তম বিসিএসে দুই হাজার ১৬৬টি পদের বিপরীতে ২১,০৫৬ জনকে উত্তীর্ণ করা হয়েছিল, যা পদসংখ্যার প্রায় ১০ গুণ। ৪৩তম বিসিএসে শূন্য পদের সংখ্যা এক হাজার ৮১৪। বিগত বিসিএসগুলোতেও শূন্য পদের চেয়ে ৬-১১ গুণ বেশি প্রার্থী টেকানো হয়। সেই হিসেবে প্রার্থী কম টেকানো হলে কাট মার্কসও বাড়ে, বেশি টেকানো হলে মার্কস কমে। এক হাজার ৮১৪টি শূন্যপদ হিসেবে ৪৩তম বিসিএসে যদি ১০ গুণ প্রার্থী টেকানো হয়, তাহলে ১৮ হাজারের মতো প্রার্থী প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে পারেন।
২. ক্যাডারগুলোর পদ পূরণ করতে যেন মৌখিক পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রার্থী পাওয়া যায়, সেটিও বিবেচনায় রাখা হয় কাট মার্কস নির্ধারণে। যেমন- ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কিছু পদের উল্লেখ আছে। পদগুলো পূর্ণ করার জন্য প্রিলিতে তুলনামূলক বেশি প্রার্থী রাখা হতে পারে।
৩. প্রশ্নের মান সহজ হলে কাট মার্কস সাধারণত বাড়ে, কঠিন হলে কমে। ৩৬তম বিসিএস ছাড়া অন্য সব বিসিএসে কাট মার্কস আনুমানিক ১০০+/- ছিল। পরীক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৪৩তম বিসিএসের প্রশ্ন ৩৬তম বিসিএসের মতো সহজ না হলেও মাঝের অন্য বিসিএসের চেয়ে তুলনামূলক সহজ এবং বিগত প্রশ্ন থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রশ্ন কমন এসেছে। তাই আগের বিসিএসের তুলনায় কাট মার্কস ৫-১০ বাড়তে পারে।
৪. বিগত বিসিএসগুলোর তুলনায় বর্তমানে বিসিএস প্রিলিতে তুলনামূলক বেশি প্রার্থী টেকানোর অন্যতম একটি কারণ হলো, ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার নিয়োগ। নন-ক্যাডারে সুপারিশের সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে প্রিলিতে অধিক প্রার্থী টেকানো হতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন বিভিন্ন প্রয়োজন ও পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রিলি পাস প্রার্থী কমাতে বা বাড়াতে পারে। এর সঙ্গে কাট মার্কসও ওঠানামা করবে। তবে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তরের একমাত্র নির্ধারক বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এবং সব প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর জানা সম্ভব নয়। তাই প্রার্থীদের সর্বনিম্ন নম্বর (কাট মার্কস) নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব।
লেখক: রবিউল আলম লুইপা, ৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ আল সিফাত