মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদকেও ‘শ্রদ্ধা জানানোয়’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহর ‘আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা নিশ্চিত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের সাথে একমত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও। তবে, ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ।
রবিবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনাকারী খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও ‘শ্রদ্ধা জানান’ বলে অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
সোমবার দুপুরে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন উপাচার্যের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এতে বলা হয়, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড, বাঙালির হৃদয়ে ‘কুখ্যাত মীর জাফর’ হিসেবে ঘৃণিত খন্দকার মোশতাক আহমদকে জ্ঞাত-অজ্ঞাতভাবে শ্রদ্ধা জানানোর মতো যেকোনো ঘটনা-বক্তব্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতির জনকের খুনির নাম উচ্চারিত হতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এ ঘটনাকে ধৃষ্টতামূলক বলে মনে করে। একই সঙ্গে শুধু বক্তব্য প্রত্যাহারই নয়, এ বক্তব্যের জন্য আমরা তাঁকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানাই। রহমত উল্লাহর আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা নিশ্চিতপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিলম্বে এ বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
স্মারকলিপি গ্রহণ শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগকে আমি ধন্যবাদ দিই, যৌক্তিকভাবেই তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করার মানুষ সমাজে খুব বেশি থাকবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাংলাদেশ, ভাষা আন্দোলন -এগুলোর সাথে ষড়যন্ত্রকারী বা অশুভ মহলের ধারণা, মত বা দর্শনের প্রতিফলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতি কখনও গ্রহণ করবে না। আমি এর সাথে সহমত জ্ঞাপন করি। আশা করি, এটার সুন্দর সমাধান আসবে।
এদিকে, ছাত্রলীগের স্মারকলিপি দেওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মোশতাক আহমেদের প্রতি ‘শ্রদ্ধাজ্ঞাপক কিছু বলে থাকলে’ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ।
এসময় তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, সেগুলো বলতে গিয়ে আমি অজ্ঞাতবশতঃ কোনো কিছু বলে থাকি, তার জন্য আমি ক্ষমা চাই। এই নামটা (খন্দকার মোশতাকের) উচ্চারণ করা ছিলো নেহায়তই আমার ইচ্ছার বাহিরে। আমি বলবো না, এটা আমি ইচ্ছাকৃত উচ্চারণ করেছি। নামটি যেহেতু উচ্চারিত হয়েছিলো, সেটাই ছিলো ভুল।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন কথা বলেছি, তখন তো সব গুছিয়ে বলিনি। অনেক পত্রিকায় দেখছি, আমি লিখিত বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু আমার বক্তব্য লিখিত ছিলো না। আমি একটা কাগজে কিছু পয়েন্ট নোট করে লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম। পয়েন্টগুলো লিখেছিলাম এইচটি ইমামের ‘বাংলাদেশ সরকার, ১৯৭১’ বই থেকে। পুরো বক্তব্যের দুই-তিন শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করলে, সামনে বা পিছনে না জানলে বক্তব্যকে অন্যভাবে ব্যাখা করার সুযোগ আছে। আমার একটি বক্তব্যে যদি ‘স্লিপ অব টাং’ হয়ে থাকে, সেটাকে দিয়ে আমাকে পুরোপুরি মূল্যায়ন বা অন্যভাবে দেখা হয়, তাহলে আমার দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়াও আর কিছু বলার নাই।
এদিকে, ‘খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা দেখানোয়’ বিকেলে রাজু ভাষ্কর্যে অধ্যাপক রহমতউল্লাহ’র কুশপুতুল দাহ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের সাথে যুক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় নীলদল থেকে মনোনীত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল