বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা শব্দ দুটি একে অপরের পরিপূরক। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব মূল্যহীন। ইউল্যাবের প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই তাই গবেষণার প্রতি অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করেন ইউল্যাবের প্রতিষ্ঠাতারা। গবেষণা খাতে ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইউল্যাবের অবস্থান বরাবরই উপরে। গবেষণাখাতে ইউল্যাবের বাৎসরিক ব্যয় প্রায় ৯ কোটি টাকা। ইউজিসি রিপোর্ট ২০১৯ সূত্রে ইউল্যাব গবেষণায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ছিল দ্বিতীয়।
ইউল্যাব প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকেই সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএসডি) গবেষণা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা পায়। এ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের জলবায়ু নিয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। টেকসই উন্নয়নের সমস্ত দিক সামনে রেখে মূল গবেষণা পরিচালনা করে এবং টেকসই উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে সিএসডি।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা প্রসারের লক্ষ্যে নিয়মিত গবেষণা-ভিত্তিক পুস্তক প্রকাশ ও ইউল্যাবে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছে কেন্দ্রটি।
দেশের প্রত্ন ঐতিহ্য আবিষ্কার, সংরক্ষণ, সংস্করণ ও গবেষণার লক্ষ্যে সৃষ্টি হয়েছে ইউল্যাবের সেন্টার ফর আর্কিওলজিক্যাল স্টাডিজ (সিএএস)। উল্লেখ্য যে, নিজস্ব অর্থায়ণে প্রত্ন ঐতিহ্য গবেষণা পরিচালনায় ইউল্যাবই বাংলাদেশে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের প্রথম নারী পরিচালক প্রত্নতত্ববিদ অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুসনে জাহানের তত্ত্বাবধানে ইউল্যাব ইতিমধ্যেই আবিষ্কার করেছে পঞ্চগড়ে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দুর্গনগরী ভিতরগড়। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মাঝে প্রত্ন ঐতিহ্য সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি, টেকসই পরিবেশ বান্ধব প্রত্ন পর্যটন গন্তব্য সৃষ্টি, স্থানীয় জনসাধারণের সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে সিএএস। ইউল্যাবের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রত্ন ঐতিহ্য সমীক্ষা ও উৎখননে অংশগ্রহণ করে।
সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স, ইউকে’র সাথে যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্লেষণধর্মী ও গুণগত গবেষণা পদ্ধতির প্রচলনের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন সহজতর করা। সেন্টার ফর এডভান্সড থিউরি’র (সিএটি) মাধ্যমে মানব বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক অনুসন্ধানে অবদান রাখছেন খ্যাতিমান গবেষক ও লেখক সলিমুল্লাহ খান। গবেষণা প্রকাশণা ছাড়াও নিয়মিত ওয়ার্কশপ, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করে (সিএটি)।
সমাজের তাত্ত্বিক এবং অভিজ্ঞতামূলক কাঠামোর মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করতে উচ্চমানের গবেষণা এবং জ্ঞান উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে ইউল্যাবের সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড সোসাইটি (সিইএস)। গবেষণা কেন্দ্রটি দেশের শিল্পোদ্যোগ সেক্টরকে একটি মজবুত নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের জন্য উপযোগী পেশাগত উন্নয়ন প্রোগ্রাম (চউচ) প্রস্তুত ও সংরক্ষণের কাজ করে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং (সিইটিএল)। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন করে থাকে সেন্টারটি। সেন্টার ফর হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিএইচপিডি) জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাথে স্বাস্থ্য এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত যৌথ গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। এটি সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, জুনিয়র স্কলার এবং ছাত্রদের জন্য একটি জার্নাল ক্লাব, একটি ওয়ার্কিং পেপার সিরিজ, পিয়ার-রিভিউ প্রকাশনা, বিদেশী ছাত্রদের জন্য স্টুডেন্ট ইন্টার্নশিপ এবং গবেষণা পদ্ধতি, ডেটা বিশ্লেষণ, উন্নয়নে নারীর জন্য নেতৃত্ব ইত্যাদির উপর শর্ট কোর্সের আয়োজন করে।
এছাড়া সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ (সিএলএস) ইউল্যাবের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকরী সহায়তা দেয়, যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের পথই সুগম করবে এমন নয় বরং তাদের পেশাগত জীবনেও যোগাযোগ ক্ষেত্রে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সহযোগিতা করবে। এ কেন্দ্রটি শিক্ষক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে থাকে।
বিশ্ব সাহিত্য অঙ্গনে বাংলা সাহিত্যকে পরিচিত করার লক্ষ্যে ট্র্যান্সেলেশন সেন্টারের বিকল্প নেই বলে মনে করেন ঢাকা ট্রান্সেলেশন সেন্টারের (ডিটিসি) পরিচালক খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও অনুবাদক অধ্যাপক কায়সার হামিদুল হক। দক্ষ অনুবাদক তৈরির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে ডিটিসি। পেশাদার অনুবাদক সৃষ্টিতে ঢাকা ট্র্যান্সেলেশন সেন্টার বাংলাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার রোধ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফেসবুকের থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং প্রোগ্রামের সাথে আন্তর্জাতিক পার্টনার এএফপি ও ফ্যাক্ট ওয়াচ যুক্ত রয়েছে। ফ্যাক্ট ওয়াচ ইউল্যাবের একটি আলোচিত প্রজেক্ট।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের নতুন সংযোজন ইউল্যাব প্রেস। গবেষণা প্রবন্ধ, পান্ডুলিপি ও পুস্তক প্রকাশের লক্ষ্যে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর ইউল্যাব প্রেসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শরু হয়। একাডেমিক ও সৃজনশীল সব ধরনের লেখা প্রকাশ হবে ইউল্যাব প্রেস থেকে। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম একাডেমিক প্রেস হিসেবে ইউল্যাব প্রেস অনুমোদন পেয়েছে।
উপরে উল্লেখিত গবেষণাকেন্দ্রগুলোতে দেশের খ্যাতিমান গবেষকদের সাথে ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা নিবিড়ভাবে গবেষণা করার সুযোগ পায়।
গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, শুধুমাত্র একটি ডিগ্রি অর্জনের জন্য গবেষণা কোনো সুফল বয়ে আনে না। গবেষণা হতে হবে জীবন-ঘনিষ্ঠ বিষয় নিয়ে, যা পরবর্তী সময়ে সমাজের কাজে লাগবে, যার সুনির্দিষ্ট ফলাফল থাকবে এবং যেটি চলমান সমস্যার সমাধান দেবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই