বৃটিশ শাষণের অবসান হলে তৎকালিন তিনআনি বাড়ির দুই জমিদার সহোদর সতেন্দ্র মোহন ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরি দেশ ছাড়েন। রেখে যান বিশাল ভূসম্পদ। ১৯৫৭ সালে ওই সম্পদের ৪৩ একর জায়গার উপর তৎকালিন সরকার শেরপুর শহরে (নারায়ণপুর-বটতলা) এক বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমা ইনিস্টিটিউট (এটিআই) প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৮৭ সালে দুই বছর মেয়াদি, ১৯৮৯ সালে তিন বছর মেয়াদি। বর্তমানে সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এখানে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা পড়ানো হয়। এখানের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতেই ডিপ্লোমা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কেটে গেছে ৭৫ বছর। এত বছরেও ডিপ্লোমাতে বন্দি থেকে গেল এটিআই। জেলাবাসীর দাবি প্রতিষ্ঠানটিকে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।
জানা গেছে, অনগ্রসর সীমান্ত জেলা শেরপুরের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রেল লাইন। বিভিন্ন সময়ে এগুলোর প্রতিশ্রুতিও কম দেওয়া হয়নি। দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলায় বিশেষ উন্নয়ন হলেও এর ছিঁটে ফুটেও এই জেলায় লাগেনি। জেলাবাসীর দাবি এই এটিআইকে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। এখানে বিস্তর অব্যবহ্নত সরকারি জমি রয়েছে। এই ক'বছরে বেশ কিছু ভবন করা হয়েছে। আরও কিছু ভবন হচ্ছে। স্থানটি শহরের উপকণ্ঠে হলেও প্রতিষ্ঠানের ভিতর গ্রামীণ পরিবেশ। প্রতিষ্ঠানের ৪৩ একর জায়গাসহ সকল স্থাপনা বিশাল এলাকা সুউচ্চ বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। রয়েছে বিশাল বড় সাতটি নান্দনিক ঘাট বাঁধানো পুকুর। জমিদারদের পরিত্যাক্ত আবাসনের কারুকাজ মন্ডিত বিশাল অট্টালিকা। জমিদারি পরিচালনার এজলাসসহ নানা প্রত্নতত্ত্ব, নৃত্যশালা আর জমিদারদের ব্যবহ্নত নানা উপকরণ। আছে বিশাল খেলার মাঠ। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে গাছ ছায়া আর নির্মল বায়ু, সব মিলিয়ে অবস্থানগত দৃষ্টিতে স্থানটি অনেকটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়য়ের মত হবে।
এতো সম্ভবনা থাকার পরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিষ্ঠানটির কিছু হয়নি। নাগরিক সমাজের দাবি এটিআই বিশ্ববিদ্যালয় হলে এখানকার গরীব শিক্ষার্থীরা এখানেই পড়তে পারবে। ভৌগলিক কারণে সুবিধা পাবে প্রতিষ্ঠানটির চারপাশে থাকা কুড়িগ্রাম জামালপুর ও রংপর ও ময়মনসিংহ জেলার বেশ কিছু অনুন্নত উপজেলা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সরকার জমি ও স্থাপনাসহ অনেক কিছুই রেডিমেট পাবে। বাঁচরে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ। সর্বপুরি এইটিই হবে জেলায় একমাত্র একটি দৃশ্যমান উন্নয়ন।
স্থানীয়রা বলেছেন, স্বাধীনতার পরে থেকেই শোনা যাচ্ছে এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। কিন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে হয়নি।স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি সারা দেশে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান হলেও শেরপুরে এর কোনো নজির নেই। তাই শেরপুরে এটিআইকে বঙ্গবন্ধু অথবা তার পরিবারের যে কারও নামে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়লে রুপান্তর করা হোক। সাধারণ মানুষের দাবি যে নামেই হোক এইটিআই বিশ্ববিদ্যালয় হোক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা (সাবেক কমান্ডার) নূরল ইসলাম হিরু, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আখরুজ্জামান, জেলা আওয়ামীলী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, জন উদ্যোগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ অসংখ্য নাগরিক বলেছেন, বিষয়টি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন। খুব দ্রুত স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্ত চিন্তার নাগরিকরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম হিরু জানিয়েছেন, যার নামে দেশ হলো তার (বঙ্গবন্ধু) বা তার পরিবারের নামে এখানে কিছুই হয়নি। এটিআইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করেত রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে চিঠি দেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ ড. মো মঈন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে বাঁধা নেই। কিছু অসুবিধা থাকলেও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার সব সুযোগ এখানে আছে। পাশাপাশি ডিপ্লোমার শাখাটা রাখলে ভালো হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল