ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবনের অব্যবস্থাপনা ও হয়রানির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অব্যবস্থাপনা ও হয়রানি বন্ধে আট দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন করছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী। বুধবার সকাল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙ্গেছেন তিনি। একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্য কার্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ভর্তি, সনদপত্র, নম্বরপত্র, বৃত্তিসহ বিভিন্ন কাজে আবশ্যিকভাবে প্রশাসনিক (রেজিস্টার) ভবনে আসতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। হয়রানির কোনো ঘটনাতে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলেই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
এমন প্রেক্ষিতে, গত কয়েকদিন ধরে রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চালাচ্ছিলেন ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত হাসনাত আব্দুল্লাহ। মঙ্গলবার থেকে আট দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন তিনি। এর আগে, গত ৩০ আগস্ট একই দাবি’তে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন হাসনাত।
হাসনাতের আট দফা দাবির মধ্যে আছে, শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অভিযোগ সেল গঠন; প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করা; নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিস সমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন; প্রশাসনিক ভবনে অফিস সমূহের প্রবেশদ্বারে সেবার বিভিন্ন তথ্য সংবলিত ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করা ও প্রয়োজনে মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হওয়া; অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিষিদ্ধ করা এবং কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর করা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশ বান্ধব করা প্রভৃতি।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসনাত আব্দুল্লাহ'র শারীরিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি হচ্ছে। সারা দিনে বেশ কয়েকবার জ্ঞানও হারান তিনি। পরে একজন চিকিৎসক আনা হলে তিনি আব্দুল্লাহকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির তাগিদ দেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ভিসি হাসনাতের দাবি মেনে নেবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন হাসনাত।
পরে দুপুর ২টার দিকে প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর পানি খাইয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ’র অনশন ভাঙ্গান উপাচার্য। এ সময় তিনি দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে উপাচার্য বলেন, আমি ঘোষণা দিচ্ছি, এই মুহূর্ত থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে দাপ্তরিক কাজের জন্য আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে যেতে হবে না। সকল কাজ হল এবং বিভাগে সম্পন্ন হবে। সেখানে আমাদের লোকবল দেওয়া আছে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। কেউ হয়রানি হলে প্রভোস্ট এবং চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানীসহ সহকারী প্রক্টর ও বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। অনশন ভাঙ্গানোর পর হাসনাত আব্দুল্লাহকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার সহপাঠীরা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে, হাসনাতের দাবি’র সাথে একাত্মতা জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ সময় তারা রেজিস্টার ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘দৌরাত্ম্যে’র সুরাহার করার দাবি জানান। দুপুরের দিকে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। এ সময় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ ছিল।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর