একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম তরান্বিত করে প্রশংসা কুড়িয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। তবে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির মতো অপকর্মের পুনরাবৃত্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, চক্রের মূলহোতারা আইনের আওতায় না আসায় অপকর্মের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ভর্তি জালিয়াতি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে না, শিক্ষা ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গতবছরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির ঘটনায় ছাত্রলীগের এক নেতার নাম গণমাধ্যমে আসে। এবছরও ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে এক নেতাকে আটক করে পুলিশ। বরাবরই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ৬ মাস আগে জালিয়াতির একাধিক মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ান। ব্যবস্থা না নেয়াই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ আহমেদ নকীব বলেন, ভর্তি জালিয়াতি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাবে খাটো করছে। জালিয়াতি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়াই বারবার জালিয়াতির পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ফলে অনেকে জালিয়াতি করে ভর্তিও হচ্ছে। তাই অভিযুক্তদের যথাসময়ে আইনের আওতায় আনলেই কেবল এই জালিয়াতি দমানো সম্ভব।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণ হলে অবশ্যই সকলের ছাত্রত্ব বাতিল হবে। তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে কেউ যাতে পার না পায়, সেই বিষয়ে তৎপর আছে প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর গত ৩০ মে রাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ৭ জন প্রক্সিদাতাকে আটক করা হয়। এঘটনায় জড়িত থাকায় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্তকে আটক করে পুলিশ। তার কাছে জালিয়াতির বিভিন্ন উপকরণ পাওয়ার কথা জানান তারা। এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছু তানভীর আহমেদের পরিবর্তে প্রক্সি দেয়ার অভিযোগে আটক হন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র স্বপন হোসাইন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের কথায় এই জালিয়াতিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। জালিয়াতির একাধিক মামলা রয়েছে ছাত্রলীগকর্মী সনেটের বিরুদ্ধে।
গত মার্চ মাসে বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় তন্ময় ও সনেটের নামে মামলা হয়। ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্নজনের থেকে ২০/২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কথা মামলায় উল্লেখ আছে। এছাড়াও গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে আটক হওয়া বায়েজিদ জিজ্ঞাসাবাদে তন্মনেয় নাম সামনে আনেন। এই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের বন্ধু। জালিয়াতির অভিযোগে তন্ময়ের নামে নগরীর ৩ থানায় ৬ মামলা আছে। তবে সকল মামলায় তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। মামলাগুলো মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি শাখার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ আগস্ট এ নেতার নামে জালিয়াতি ও অপহরণের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়েছে। এ অভিযোগে তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
অভিযোগ আছে, দেশের বিভিন্ন চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত এই ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়। জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন এই সংঘবদ্ধচক্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগ এক নেতা জানান, দলের কেউ প্রত্যক্ষভাবে তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই কোন প্রভাবশালী শিক্ষককের ছত্রছায়াই এসব কর্মকাণ্ড করছেন তন্ময়। যার পিছনে রয়েছে বিশাল রাজনৈতিক সাপোর্ট।
জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানায় হওয়া জালিয়াতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (ডিবি) সাইমন ইসলাম জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। যেকোন সময় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।
মামলার সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আল মামুন। শুধু মামলার তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল