এক সময় গ্রামগঞ্জের খাল-বিল-পুকুরে যেদিকেই চোখ পড়ত জাতীয় ফুল শাপলা দেখা যেত। বর্ষায় শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি-সাহিত্যকরা শাপলা বন্ধনায় মেতে উঠতেন। জলবায়ুর পরিবর্তন ও নানা কারণে রংপুর অঞ্চল থেকে শাপলা ফুল হারিয়ে যেতে বসেছে। বিভিন্ন জলাশয় থেকে অনেকটা বিলুপ্ত প্রায় শাপলা ফুল। তার পরও হাতে গোনা দু-এক জায়গায় শাপলা দৃষ্টিগোচর হলে ফুলের সৌন্দর্যে মেতে ওঠেন অনেকেই। বিশেষ করে লাল শাপলায়। তেমনি একজন প্রকৃতিপ্রেমিক কবি, লেখক ও ওয়ার্ল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার রানা মাসুদ নিজ বাড়ির লনে লাল শাপলা ফুটিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। গতকাল সকালে রংপুর নগরীর সেনপাড়ার বাড়িতে ঢোকার পরই লনে দেখা মিলল যুগল এ লাল শাপলার। লনে রানা মাসুদ একটি ঝরনা তৈরি করেছেন। সেই ঝরনাতেই শাপলা তার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে। রানা মাসুদ বলেন, চার মাস আগে একটি বিল থেকে এ শাপলা এনে ঝরনায় লাগিয়েছিলাম। চার মাসেই ফুল এসেছে। তিনি জাতীয় ফুল শাপলা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করেন, গ্রামগঞ্জে এখন যেটুকু শাপলা ফোটে তা এক শ্রেণির মানুষ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা শাপলা তোলার সময় একেবারে গোড়া থেকে তোলেন। ফলে ওই স্থানে আর শাপলা গজাতে পারে না। এভাবে কমে যাচ্ছে শাপলার বিস্তার। বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না বলেন, বড়-ছোট সবার কাছে প্রিয় ফুল শাপলা। অনেক স্থানে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকাতেও স্থান করে নিয়েছে। শাপলা পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং সবজিগুণে ভরপুর। শাপলা বাংলার এতিহ্য। বর্তমানে অনেক স্থানে জলাশয় ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ, মাছের ঘের নির্মাণ, জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে শপলা আর আগের মতো চোখে পড়ে না। শাপলার ঢ্যাপ দিয়ে এখনো অনেক এলাকায় খই জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়। জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে। পূর্ণিমা রাতে শাপলা নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশে নয় থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে এই ফুল পুকুর ও বাগান সাজাতে খুব জনপ্রিয়। সাদা শাপলা বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ইয়েমেন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পুকুর ও হ্রদে দেখা যায়। শাপলা ফুল ভোর বেলা ফোটে এবং দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁপড়ি বুজে যায়। সরাসরি কা ও মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কা বা ডাঁটি বা পুষ্পদ পানির নিচে মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এ মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির ওপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম নেয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয় কিন্তু নিচের দিকে কালো রং। ভাসমান পাতাগুলোর চারদিক ধারালো হয়। পাতার সাইজ ২০ থেকে ২৩ সেন্টিমিটার এবং এদের ব্যাপ্তি প্রায় ০.৯ থেকে ১.৮ মি। শাপলা ফুল গোলাপি, সাদা, নীল, বেগুনি ইত্যাদি রঙের হয়ে থাকে।
বছরের প্রায় সব সময় শাপলা ফুটতে দেখা গেলেও বর্ষা ও শরৎ এই উদ্ভিদ জন্মার উপযুক্ত সময়। শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পয়সা, টাকা, দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা রয়েছে।