বোরখা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ-আল মামুনের বির্তকিত মন্তব্যের জেরে প্রতিবাদ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। এ শিক্ষককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিও জানান প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার এক স্মারকলিপি প্রদান করে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘রাকসু প্রতিনিধিরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ-আল মামুন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক পোস্টে রাকসু নির্বাচনে হল সংসদে বিজয়ী নারী প্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত পোশাক, নারীর ধর্মীয় পরিচয় এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সম্পর্কে অবমাননাকর ও বিদ্বেষপ্রবণ মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি তিনি পূর্বের পোস্টগুলোতে ‘বোরকা’,‘কাঠমোল্লা’, ‘মদ’, ‘সেক্সুয়াল রেভল্যুশন’, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে উসকানিমূলক কনটেন্ট দিয়েছেন ও এক পোস্টে টু-কোয়াটার ও মদের বোতল হাতে নিয়ে ক্লাসে আসার এবং একটি ছাত্রসংগঠন ও সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা স্পষ্টতই উসকানিমূলক এবং শিক্ষাঙ্গনের নৈতিক মান ও পেশাগত দায়িত্ববোধের গুরুতর লঙ্ঘন।
আরও বলা হয়েছে, একজন শিক্ষক হিসেবে ড. আ-আল মামুনের এই মন্তব্য শুধুই ব্যক্তিগত মতামত নয়, এটি শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা-আত্মবিশ্বাস এবং শিক্ষকের দায়িত্ববোধকে চ্যালেঞ্জ করছে। তিনি নারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, ধর্মীয় অনুশাসন ও পোশাককে ব্যঙ্গ করে যে মনোভাব প্রকাশ করেছেন, তা হিজাব-ফোবিয়া এবং নারীবিদ্বেষী মনোভাবে উৎসাহ যোগায়। যা কোনো শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনুরুপ নয়।
রাকসুর দৃঢ় অবস্থান হলো নারীর পোশাকের স্বাধীনতা, হিজাব ও নিকাব কোনো অপরাধ নয় এবং তা পশ্চাৎপদতার চিহ্নও নয়। বরং এটি একজন নারীর নিজস্ব পরিচয়, বিশ্বাস, আত্মমর্যাদা ও শালীনতার প্রতিফলন। একজন শিক্ষক বা নাগরিকের নৈতিক অধিকার নয় কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাস বা পোশাককে ব্যঙ্গ করা।
রাকসু প্রতিনিধিদের দাবি আল মামুনকে জনসম্মুখে এই অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে; ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সাপেক্ষে শিক্ষকতার শপথ, কর্মসংস্কৃতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘনের অপরাধে যথাযোগ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মানসিকতার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ সার্বিক নীতিমালা প্রণয়ন; এমন কর্মকাণ্ডে সতর্কতামূলক ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা, সাম্য ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জোরদারের লক্ষ্য কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এরআগে, ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন নবনির্বাচিত রাকসু হল সংসদ প্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে বোরখা পড়া ছবি পোস্ট করে কিছুক্ষণ পর সেটা সরিয়ে নেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পোস্টের স্ক্রিনশট বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্ক শুরু হয়। রাতেই পর্দা অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে বহিষ্কারের দাবিও জানানো হয়।
আ-আল মামুন ডিলিট করা পোস্টের স্ক্রিনশটে লেখা ছিল, ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!’ (নিচে রাকসু হল সংসদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের দুটি ছবি যুক্ত করেন তিনি)
এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক আ-আল মামুন।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক