আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা ও নজরদারির অভাবে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় মাদক এখন হাতের নাগালে। যেন ফেরিওয়ালার বাদাম, হাত বাড়ালেই মিলছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত গাঁজা, মদ, ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক সহজলভ্য হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাজনগর, পাঁচগাঁও ও কামারচাক ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি মাদক বেচাকেনা হয়। দিনরাত প্রকাশ্যেই চলে কেনাবেচা। দীর্ঘদিন ধরে মাদকবিরোধী সভা, সেমিনার ও মানববন্ধন করেও কোনো সুফল মিলছে না।
মাদকের ভয়াল ছোবলে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ছে। তরুণ সমাজ, স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, গাড়িচালক, এমনকি রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও এই তালিকায় রয়েছেন। উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের চেয়ে কয়েক গুন বেড়েছে মাদক কারবারি। বেচাকেনা হতো খুব গোপনে। বর্তমানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে মাদক কারবারিরা। স্থানীয়রাও ভয়ে এসব মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছেন না। ফলে উপজেলাতে এখন অবাধে চলছে মাদক কেনাবেচা। উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিত্তশালীরা ফেনসিডিলে ঝুঁকছেন, আর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ সস্তা গাঁজা ও ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছেন। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে ঘুরে বেড়ানো ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের দেখা মিলছে প্রতিদিনই। অনেক বাজার ও গ্রামে প্রকাশ্যেই চলছে এই ব্যবসা।
গত ১৩ অক্টোবর পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় মানুষ মানববন্ধন করে মাদক ব্যবসা বন্ধের দাবি জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, থানার দায়িত্বে থাকা এক উপপরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে কিছু মাদক কারবারির সুসম্পর্ক রয়েছে বলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর রাজনগর সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ খারপাড়া গ্রামে এক মাদক কারবারির ঘর স্থানীয়রা পুড়িয়ে দেন। এরপর আবারও মানববন্ধন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান এলাকাবাসী। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জুবের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেইনি। মাদকমুক্ত রাজনগর চাই আমরা।’
উপজেলার এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ‘মাদকের ভয়াল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে অল্পবয়সী তরুণ ও শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা এখন সন্তানদের নিয়েও আতঙ্কে।’
রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোবারক খান বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত চলছে। মাদক কারবারিদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক