সিলেট নগরীর বন্দরবাজার করিমউল্লাহ মার্কেটের সামনে থেকে মেজরটিলায় যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন জাহিদ আরমান। অটোরিকশায় আগে থেকেই বসা ছিলেন চার যাত্রী। আরমান ওঠার পরই অটোরিকশা ছেড়ে দেন চালক। টিলাগড় পার হওয়ার পর পেছনের সিটে পাশে বসা একযাত্রী ছোরা ধরেন আরমানের কোমরে। আরেক যাত্রী পকেট থেকে হাতিয়ে নেয় মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন সেট। এরপর আরমানকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় চালক ও যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা।
ছিনতাইয়ের শিকার জাহিদ আরমান মেজরটিলা ইসলামের বাসিন্দা। পড়ালেখা করেন নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত সোমবার রাতে বাসায় ফেরার পথে অভিনবপন্থার এই ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বন্দরবাজার-মেজরটিলা সড়কই নয়, টিলাগড়-আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট-কোর্ট পয়েন্ট, কোর্ট পয়েন্ট-টার্মিনালসহ বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে। অটোরিকশায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে গত ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় প্রাণ হারান শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাহিদ আল সালাম। ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল। এ ঘটনায় দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ছিনতাইকারীরা নিত্যনতুন উপায়ে ছিনতাই কাজ চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ একটি ছিনতাইকারী চক্র সিলেটজুড়ে তৎপর রয়েছে। তারা বাস, সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনায় যাত্রীবেশে ওঠে কৌশলে ছিনতাই করে সটকে পড়ে। বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকশাকেই ছিনতাই কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। কতিপয় সিএনজি অটোরিকশাচালক ছিনতাইকারীদের সহযোগি হিসেবে কাজ করেন। যেসব যাত্রী একা, তাদেরকেই টার্গেট করে ছিনতাইকারীরা। অটোরিকশায় তুলে পেছনে মধ্যখানের সিটে বসানো হয় যাত্রীকে। দুই পাশে বসে ছিনতাইকারীরা। চলার পথে নির্জন স্থানে অস্ত্র ধরে হাতিয়ে নেয়া হয় যাত্রীর সবকিছু। এছাড়া অনেক সময় যাত্রীর কাছ থেকে ভাংতি টাকা নেয়ার অজুহাতে তার মানিব্যাগ বের করায় ছিনতাইকারীরা। যাত্রী যখন পকেটে মানিব্যাগ রাখতে যান, তখন কৌশলে সেটি হাতিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এরকম অন্তত এক ডজন ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, ছিনতাইকারীদের নিত্যনতুন এমন কৌশল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ। ছদ্মবেশী ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের সুপারিশ দিয়ে গেল মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) আবদুল ওয়াহাব স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন হিসেবে ১৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে অটোরিকশায় অপরিচিত যাত্রী থাকলে না ওঠা, জনসমাগম কম এমন স্থান এড়িয়ে চলা, অটোরিকশায় ওঠার সময় সেটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লিখে রাখা বা এসএমএসের মাধ্যমে স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে রাখার কথা বলেছে পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের রুখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন সময় ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
বিডি-প্রতিদিন/৮ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল