চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সিলেট জেলার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনায় মামলা হয় ৩২টি। আর করোনাকালে এপ্রিল মাসে এ ধরনের মামলা হয়েছে ঠিক দ্বিগুণ, ৬৪টি!
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো এপ্রিল মাসই সরকারি সাধারণ ছুটি ছিল। এছাড়া সিলেট জেলাও লকডাউন ছিল সিংহভাগ সময়। এই ছুটি আর লকডাউনের মধ্যেই সিলেটে বেড়ে গেছে সামাজিক ও পারিবারিক সহিংসতার মাত্রা।
সিলেট জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারি মাসে সিলেট জেলায় বিভিন্ন ঘটনায় মামলা হয় ২২২টি। এর মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা তথা দুই ভাইয়ে বিরোধ, দুই পরিবারে বিরোধ, বাড়ির সীমানা নিয়ে মারামারি, জমি নিয়ে মারামারি-এ ধরনের ঘটনায় জানুয়ারিতে ৩২টি মামলা হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ২২০টি মামলার মধ্যে মারামারি, বিরোধের এসবের মামলা ছিল ৪১টি।
মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনা হানা দেয়। মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ২৬ মার্চ থেকে সিলেটসহ সারা দেশ সরকারি ছুটির মধ্যে রয়েছে। এ মাসে সিলেট জেলায় মামলার সংখ্যা ছিল ২২২। এর মধ্যে পারিবারিক আর সামাজিক সহিংসতার মামলা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২টি।
পুলিশ বলছে, ১১ এপ্রিল থেকে সিলেট জেলা লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। এ মাসে সিলেটে অন্যান্য অপরাধ কমে গেলেও পারিবারিক বিরোধ, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ, দুই ভাইয়ে মারামারি এসব ঘটনা বেড়ে গেছে। এপ্রিলে সিলেটে মোট মামলা যেখানে ১৫৮, সেখানে ওই পারিবারিক আর সামাজিক সহিংসতার মামলাই ৬৪!
চলতি মে মাসেও পারিবারিক, সামাজিক বিরোধের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি।
এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণ আছে বলে মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দি। অন্য কোনো কাজ নেই মানুষের। টানা ঘরবন্দি থাকাটা একদিকে মানসিক চাপের বিষয়, মেজাজকে খিটখিটে করে দিচ্ছে; অন্যদিকে কাজ না থাকায় মানুষ নিজের সহায়-সম্পত্তির দিকে নজর দিচ্ছে। এসবের ফল দাঁড়াচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা।
জানতে চাইলে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান বলেন, ‘সরকারি ছুটি আর লকডাউনের মধ্যে পারিবারিক, সামাজিক বিরোধের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। জানুয়ারিতে এ ধরনের অপরাধে মামলা ছিল ৩২টি, এপ্রিলে দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৬৪টি।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে নিজের বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছে। এই সময়ে জমির সীমানা নিয়ে মারামারি হচ্ছে, বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধ হচ্ছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটছে।’
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত