সিলেটে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সুরমা নদীর তীরবর্তী নগরী ও অন্যান্য এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও বন্যা থেকে মুক্তি মিলছে না মানুষের। মঙ্গলবার (২১ জুন) দিবাগত রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ায় ধলাই, পিয়াইন, লোভা ও সারি নদী তীরবর্তী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। সিলেট জেলার অসংখ্য মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। দুর্গম এলাকাগুলোতে এখনো সরকারি ত্রাণ না পৌঁছার অভিযোগ করেছেন অনেকে।
বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার বেশ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যে কারণে জেলার বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
কুশিয়ারায় পানি বৃদ্ধির ফলে বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্যা উপদ্রুত এলাকার সংখ্যা। ইতোমধ্যে উপজেলার ১১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ৪০টি বিদ্যালয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চালানো হলেও এখনো তা প্রয়োজনের চেয়ে খুব কম।
কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধির ফলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মুহুর্তের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাটবাজার। এ উপজেলার অন্তত ৮০ ভাগ মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি রয়েছেন। ওসমানীনগর উপজেলার কুশিয়ারা তীরবর্তী প্রায় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এতে উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কুশিয়ারা তীরবর্তী গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি এবং সুরমা তীরবর্তী এলাকায় ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। একইভাবে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সুরমা তীরবর্তী এলাকায় উন্নতি হলেও পার্শ্ববর্তী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যার পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙনের ফলে প্লাবিত হচ্ছে জনপদ। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ।
আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সিলেট সদর, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বিশ্বনাথ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে এসব এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে বন্যা আক্রান্ত উপজেলাগুলোতে তীব্র খাদ্য-সংকট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ও হাটবাজার তলিয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এছাড়া খাদ্যসামগ্রীর দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। উপদ্রুত দুর্গম এলাকাগুলোতে টাকা দিয়েও খাদ্যসামগ্রী মিলছে না। অনেক জায়গায় এখনো সরকারি উদ্যোগে পৌঁছেনি কোন ধরণের ত্রাণ।
এদিকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নামতে শুরু করলেও এখনো ঘরে ফিরতে পারছেন না মানুষ। নগরীর অধিকাংশ এলাকায় হাঁটু পানি রয়েছে। বন্যাকবলিত নগরীর বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের অভিযোগ করেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা বন্যার্তরা। তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা ট্যাংক বিভিন্ন পাড়ামহল্লার সামনে এবং আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর