সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলনে হতাহতের ঘটনায় ‘পূর্বপরিকল্পিত’ কিছু পায়নি পুলিশের তদন্ত কমিটি। এ ঘটনা তদন্তে নেমে দুর্ঘটনার জন্য কয়েকটি কারণ দাঁড় করাচ্ছে পুলিশ। অতিরিক্ত ভিড় ও রিমা কমিউনিটি সেন্টারের ফটকের ভেতরে নির্মাণের ক্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা বলে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, সকাল থেকে সব ঠিকঠাক মতো চলছিল। হঠাৎ করে দুপুরে এক সাথে এতো লোক কোত্থেকে আসলো? এটা কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোন কারণ আছে তা আরো তদন্ত করা দরকার।’
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নওফেল সাহেব বক্তব্য দিয়েছেন যে, হঠাৎ করে দুপুরে এক সাথে এতো লোক কোত্থেকে আসলো?। ওনার এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত না। কারণ দুপুরের খাবার খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে ১টা। এই সময়ে না এসে কেউ তো সকাল ১১টা অথবা বিকেল ৩টায় আসবে না। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য একসঙ্গে অধিক মানুষ এসে হুড়োহুড়ি করে প্রবেশ করতে গিয়েই দুর্ঘটনা।’
পদদলনের ঘটনা তদন্তে গঠিত পুলিশের তিন সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) এস এম মোস্তাইন হোসেনকে। আজ তিনি বলেন, ‘তদন্ত করার জন্য তিনদিনের সময় দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার শেষ দিন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার। রাতে হলেও আমরা কমিশনার স্যারকে প্রতিবেদন জমা দেব। এ পর্যন্ত তদন্ত করে আমরা যা পেয়েছি, সেটা হচ্ছে, তাড়াহুড়া করে ঢুকতে গিয়েই মূলত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এ পর্যন্ত পূর্বপরিকল্পিত কোনকিছু আমরা পাইনি। এটা একটা দুর্ঘটনা।’
রিমা কমিউনিটি সেন্টারে দুর্ঘটনার পর লাল শার্ট পরা এক যুবকের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়। এই ছবি শেয়ার করে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন- পদদলনের ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল কিনা? ওই যুবক কে, তার উদ্দেশ্য কী ছিল তা খতিয়ে দেখার দাবিও ওঠে।
এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘লাল শার্ট পরা যে যুবকের কথা বলা হচ্ছে, সে নিজেই তো ভিকটিম। সে নিজেই পড়ে গিয়েছিল। লাল শার্ট পরিহিত কাউকে সন্দেহ জাগে এমন কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখিনি আমরা।’
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফুটেজে দেখা গেছে, অনেক লোক বাইরে অপেক্ষা করছিল, ভেতরে যত জন ছিল, তার চেয়ে বাইরে রাস্তায় বেশি লোক অবস্থান করছিল। একটা সময় স্বেচ্ছাসেবকরা গেইট খুলে দেওয়ায় এক সঙ্গে বিপুল সংখ্যক লোক ঢোকার চেষ্টা করে। পাশাপাশি কমিউনিটি সেন্টারের প্রবেশ পথে তিন-চার ফুট ঢাল হওয়ায় একসঙ্গে তারা ঢুকতে গেলে ভারসাম্য রাখতে না পেরে নিচের দিকে পড়ে যায়। মূলত অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে এবং কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ পথে নির্মাণজনিত ক্রুটির কারণে এই ঘটনা ঘটে। নাশকতার বা অন্য কোন কারণ আমি পাইনি।
মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে গেইট খোলার পর মানুষ যখন ভেতরে প্রবেশ করছিলো তখন কেউ একজন মাটিতে কিছু একটা খুঁজতে গিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। ২-৩ মিনিট শুধু ওই লোকটিকে ঘিরে পেছন থেকে মানুষর চাপ অব্যাহত ছিল। আর তাতেই শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান ১০ জন। এখানে এমন নয় যে, নিহতদের শরীরের উপর দুই-চার হাজার মানুষ হেঁটেছে। এ অল্প সময়ে শ্বাসজনিত সমস্যায় এতো মানুষ মারা যাবে তা ভিডিও দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার নগরীর আসকার দীঘির পাড়ে রিমা কমিউনিটি সেন্টারে মহিউদ্দিনের কুলখানির মেজবানে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে অন্তত ১০ জন নিহত হন। এই ঘটনায় আরও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার