রেলওয়ের ১ হাজার ২৬ জন অস্থায়ী গেইট কিপার পদের নিয়োগের ফলাফল ঘোষণা করা হলেও এখনও শেষ হয়নি ডাক্তারি পরীক্ষা। রেলওয়ে মেডিক্যাল হাসপাতালে বিভিন্ন মেডিক্যাল টেস্ট করতে আসা চাকরি প্রার্থীরা পদে পদে হয়রানি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নানাবিধ হয়রানির বিষয়ে ‘ক্ষোভে ফুসে’ উঠে বিক্ষোভ করেছেন মেডিক্যাল ষ্টেট দিতে আসা প্রার্থীরা। মেশিন নষ্টের অজুহাতে রেলের মেডিক্যালে এক্সেরে না করে সেইফ সেন্টার নামে নিদিষ্ট একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে করা হচ্ছে সিন্ডিকেট করে। মেডিক্যলের বিভিন্ন পরীক্ষাসহ নানাবিধ অনিয়মে জড়িত আছে একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য করার অভিযোগ প্রকাশ্যে সিআরবিসহ রেল অঙ্গনের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা যায়।
তাছাড়া ডিএমও অফিসের প্রধান সহকারি আমীর খসরুকে দাপ্তরিক সকল নথিপত্রসহ দায়িত্ব না দিয়ে অন্য স্টাফের মাধ্যমে কাজ করানোর অভিযোগও উঠেছে। এ বিষয়ে তিনি (আমীর খসরু) ১২ মার্চ লিখিত অভিযোগও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীল বরাবরে। সবমিলে তিনদিন ধরেই মেডিক্যাল ষ্টেট করতে আসা ভুক্তভোগিদের মধ্যে চলছে পদে পদে নানারকম হয়রানি।
অভিযোগ রয়েছে, ডিএমও ইবনে শফি আবদুল আহাদ, স্টেনো সোহেল, ক্লিনার জসিম, মেডিক্যালের স্টাফ মুনছুর, আবদুল্লাহ, কামরুলসহ বেশ কয়েকজন মেডিক্যাল ষ্টেটের নামে ‘কৌশলে মোটা অংকের টাকা আদায় করছেন। রয়েছে সেইফ সেন্টার নামে একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে আতাঁতও। অস্থায়ী গেইট কিপারের ১ হাজার ২৬ জনের মধ্যে প্রায় প্রতিজন থেকে সরকারি সামান্য একটা ফি দেয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা নেয়া হয় বিভিন্ন টেস্টে। অনেকেই উর্দ্ধতনদের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকাও নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগিরা।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগীয় রেলওয়ে মেডিক্যাল অফিসার ইবনে শফি আবদুল আহাদ বলেন, এক্সেরে মেশিন নষ্টের কারণে সরকারি কোন মেডিক্যাল থেকে এক্সেরে করতে সবাইকে বলেছি। কেন সেইফ সেন্টারে যাচ্ছে জানিনা এবং প্রতিষ্ঠানটি কোথায় জানিও না।
তিনি বলেন, আমার দপ্তরের কাজ কাকে দিয়ে করবো সেটি আমার ইচ্ছা। যিনি এখন দায়িত্ব পালন করছেন তিনি আমার বিশ্বস্ত মনে করেই দায়িত্ব দিয়েছি। যিনি অভিযোগ দিয়েছেন, সে বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে উত্তর তখন দিবো। তবে কোন অনিয়ম বা টাকার লেনদেনের বিষয়ে অামি অবগত নই এবং জড়িত নই।
ডাক্তারি পরীক্ষা দিতে আসা রংপুরের কলিমুল্লাহ (ছদ্ধনাম) ক্ষোভের সাথে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম এসেছি তিনদিন হয়ে গেছে। স্বাক্ষর করবে এমন কেউ নেই জানিয়ে ঘুরাঘুরি করে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য স্লিপ নিয়ে লাইন ধরতে হয়। মেডিক্যাল স্লিপ, এক্সেরেসহ বিভিন্ন রিপোর্টের জন্য স্টেনো সোহেল ও ক্লিনার জসিমকে ১ হাজার থেকে আরো বেশী টাকা দিতে হয়। তাছাড়া রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করার সময় দায়িত্বশীলদের ৩০০-৫০০ টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পড়ে আসতে বলে।
আবদুল করিম (ছদ্ধনাম) নামের আরেক চাকরি প্রার্থী বলেন, রেলের এক্সেরে মেশিন খারাপ জানিয়ে ক্লিনার জসিমসহ কয়েকজন কর্মচারি সেইফ ল্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে ৩শ' ৫০ টাকা দিয়ে এক্সেরে করতে হয়। সেই সেন্টারের সাথে ডিএমও আবদুল আহাদ, স্টেনো সোহেল ও ক্লিনার জসিমসহ কয়েকজন স্টাফের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এতে প্রতিটি কাজ থেকে মোটা অংকের টাকাও পান বলে অভিযোগ করেন তারা।
পূর্বাঞ্চল চীফ রেলওয়ে মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) ডা. পরিতোষ চক্রবর্তী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রেলের অস্থায়ী গেইট কিপার নিয়োগ চূড়ান্ত করতে চাকুরি প্রার্থীদের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। এসব বিষয়গুলো দেখাশোনা করেন ডিএমও। অতিরিক্ত টাকা নেয়া ও হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নিয়মানুযায়ী যিনি দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে, সেখানে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করছেন বলে স্বীকার করেছেন এবং লিখিত অভিযোগও পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনদিন ধরেই রেলের অস্থায়ী গেইট কিপারের চাকরি চূড়ান্তকরণের জন্য রেলের মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়। সেই পরীক্ষা সকাল থেকেই লাইনে দাড়িয়ে আছে চাকুরিতে যোগদান করতে আসা প্রার্থীরা। জনবল সংকট দেখিয়ে প্রতিদিন ৩০ জন করে টেস্ট নিলেও গোপনে ভুক্তভোগিদের কাজ থেকে রেলের স্টাফরা টাকার বিনিময়ে কাজ করছে। টাকা দেয়ার পরও হয়রানির শেষ নেই বলে জানান উপস্থিত ভুক্তভোগিরা।
বিডি প্রতিদিন/১৩ মার্চ ২০১৮/হিমেল