এশিয়ার অন্যতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের ১৩১তম বন্দর দিবস পালন করেছে। এ উপলক্ষে বুধবার দেশের এই প্রধান বন্দরের ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা সাজানো হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য আয়োজন করা হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানী।বন্দর দিবসের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান।
সোমবার বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ বন্দর দিবসের অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের অর্থনীতির গতিপ্রবাহে আমদানি-রফতানির যে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে, তাতে আমাদের নতুন করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রতিবছরই এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে আরো সুসংহত করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকার এই বন্দরের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এগুলো বাস্তবায় হলে চট্টগ্রাম বন্দর আরো সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড এই চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ও খ্যাতি সুদীর্ঘকালের। এই বন্দরের ব্যাপ্তি ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে পশ্চিমের দেশেও ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ৪০০ বছর আগে। বনিকদের মধ্যে আরব, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, হার্মাদদের সরাসরি বাণিজ্যিক যোগাযোগ শুরু হয় ১৭০০ সালের দিকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১৮৬০ সালে এ বন্দরে দুটি মেকসিফট জেটি তৈরি করে। ১৯৮৭ সালে প্রণীত হয় ‘চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার অ্যাক্ট’। পরের বছর ২৫ এপ্রিল এ আইনের অধীনে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এ বন্দরের। ওই দিনটি বন্দর দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে কর্তৃপক্ষ। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৩১তম বন্দর দিবস। ১৮৯৯ সালে আমদানি-রফতানি সুবিধার্তে গঠিত হয় আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৮৯৯ সালে জেটি নির্মাণের মাধ্যমে শুরু হয় পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের দ্বৈত শাসন। ১৯৬০ সালে গঠিত হয় চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বন্দর পরিচালিত হয়। ওই বছরই অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৯ জন নৌকমান্ডো দুঃসাহসী অভিযান পরিচালনা করে। তারও আগে পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজ ‘এমভি সোয়াত’ থেকে অস্ত্র খালাসে অস্বীকৃতি জানায় ডক শ্রমিকরা। ২৪ মার্চ ৩ নম্বর জেটির সামনে বিদ্রোহী মিছিলে গুলি চালিয়ে শহীদ করা হয় ২৩ জনকে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে সোভিয়েত সরকার (বর্তমান রাশিয়া) যুদ্ধকালীন মাইন ও ডুবে যাওয়া জাহাজ অপসারণ করে বন্দরকে সচল করে। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ ভাগ পণ্য পরিবাহিত হয়। এবং দেশের ৯০ ভাগ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে এই বন্দর দিয়েই। তাই এ বন্দরকে বলা হয় ‘সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার’।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার