চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের সবুজবাগ আবাসিক এলাকার কয়েকটি স্থানে পানিবাহিত জন্ডিস ও ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সবুজবাগ আবাসিক এলাকার কালিবাড়িতে ১১ জন এবং বড় মসজিদ এলাকায় ১৪ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সচেতন হলেই এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যাবে। পানিবাহিত রোগ থেকে গর্ভবতী মা-শিশুসহ সবাইকে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি পান, ওয়াসার পানি ৩০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে পান ও ব্যবহার করা, রাস্তার পাশের শরবত না খাওয়া এবং বাসি খাবার না খাওয়া ইত্যাদি।
হালিশহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেবল সবুজবাগ নয়, আরো বেশ কিছু এলাকায় পানিবাহিত এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নয়া বাজার এলাকা, বউ বাজার, পানির কল, নয়া বাজার বিশ্ব রোডসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ঘরে জন্ডিস ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী আছে বলে জানা যায়। সবুজবাগ বড় মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মুনির উদ্দিন বলেন, ‘ওয়াসার পানি সরবরাহের লাইনের সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগ এক হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। ফলে ‘হেপাটাইটিস ই’ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গেছে। আমাদের বাসায়ও দুইজন জন্ডিস রোগে আক্রান্ত আছেন।’
হঠাৎ পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি তদন্তে ঢাকার রোগতত্ত্ব-রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে পাঁচ সদস্যের একটি দল গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আসেন। তদন্ত টিম বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে ২৫ জন রোগী শনাক্ত করেন।
জানা যায়, ঢাকার তদন্ত টিম গতকাল সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে প্রায় অর্ধশত রোগীর স্যাম্পল সংগ্রহ করে। এ সব স্যাম্পল ঢাকায় নিয়ে রোগ, রোগের ধরণ ও কারণ নির্ণয় করা হবে। তাছাড়া এ দলটি হালিশহরের বিভিন্ন এলাকার পানির স্যাম্পলও সংগ্রহ করেছে। পাঁচ সদস্যের টিমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইইডিসিআর এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মনজ্রু ই ইলাহি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘পানিবাহিত জন্ডিস ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সবুজবাগ এলাকার মানুষ। গতকাল সরেজমিন পরিদর্শন করে ২৫ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া রোগীর স্যাম্পল ও কিছু এলাকার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। এগুলো টেস্ট করার পরই জানা যাবে আসল কারণ। তবে আমরা এলাকায় বলে এসেছি, এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একটু সচেতন এবং পানি ফুটিয়ে খেলেই এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যাবে।’
জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে গত এপ্রিলে ৮৯৩ জন রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৬০০ জন ছিল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এর মধ্যে তিন শতাধিক রোগী ছিলেন হালিশহর এলাকার। আর হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন ১২ জন। তাদের বয়স ১৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার