চিকিৎসা সেবার অবেহেলায় শিশু মৃত্যুসহ নানা অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স, সিএসসিআর ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের জন্য চিকিৎসা সেবা বন্ধ অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে কিছু হাসপাতালের গেইট খোলা থাকলেও সেখানে কোনো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। এতে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।
সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরের প্রায় সব হাসপাতাল-ল্যাবে অভিন্ন ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব সেবা কেন্দ্রের প্রবেশ পথও বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সিএসসিআর-এর মতো কিছু বেসরকারি হাসপাতাল খোলা থাকলেও সেখানে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না। যদিও সকাল থেকে হাসপাতালে রোগীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও তারা চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না। ডাক্তারদের চেম্বারগুলোও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে, বেসরকারি সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চসেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাক্তাররাও এই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমনিতেই চমেক হাসপাতালে ১৩১৩ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এখন বেসরকারি চিকিৎসা বন্ধ হওয়ায় এই চাপ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, চিকিৎসা সেবার অবেহেলায় শিশু মৃত্যুসহ নানা অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স, সিএসসিআর ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে দুপুরে এক জরুরি সভা শেষে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী অনির্দিষ্টকালের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মু. সিকান্দর খান বলেন, ‘সরকারের আইনী সংস্থা যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া আইনী পদক্ষেপের কারণে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার কোনো অধিকারও কারো নেই। নাগরিক হিসেবে সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের মানতেই হবে। কেউ এর বিরুদ্ধে গেলে তার নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত। এখন তো সরকারি পদেক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণনকেই জিম্মি করা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে আইনী প্রতিষ্ঠানকে। অথচ আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। হ্যাঁ, এ ব্যাপারে কেউ ক্ষুব্ধ হলে আদালতের দরজা তার জন্য খোলা আছে।’
চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দ্রুত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়তো উচিত হয়নি। তাদের সিদ্ধান্তের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হবেন। তাই আমরা মনে করি, বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুন দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের মেয়ে রাইফা খানকে গলায় ব্যথা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে মৃত্যু হয়। এর পর রুবেল খান ভুল চিকিৎসায় মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিভিল সার্জন থেকে পৃথক দুটি কমিটি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তে ম্যাক্স হাসপাতালের ১১টি অনিয়ম-ত্রুটি শনাক্ত করে। তাছাড়া সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটিও কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা বলে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ জুলাই, ২০১৮/মাহবুব