যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব আমেরিকা এক নজিরবিহীন আইনি জটিলতার মুখে পড়েছে। অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি তাদের ঘণ্টাভিত্তিক শত শত কর্মীকে নিয়মিত কাজের বাইরে অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়েও বেতন দেয়নি। মামলার দাবি, প্রতিদিন অফিসে কম্পিউটার চালু করা, সফটওয়্যার লোড দেওয়া, এবং ভিপিএন সংযোগ স্থাপনসহ নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে সময় ব্যয় হতো, কিন্তু সেই সময়ের জন্য কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হতো না।
আইনি ওয়েবসাইট ল ৩৬০–এর তথ্যমতে, সাবেক কর্মী তাভা মার্টিন এই সম্মিলিত বা গণমামলাটি করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, কর্মীদের এনক্রিপ্টেড ড্রাইভ আনলক করা, মাল্টিফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনের মাধ্যমে লগ ইন করা, ভিপিএন সংযোগ স্থাপন করা এবং প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন চালু করতে বাধ্য করা হতো। প্রতিদিন এই প্রক্রিয়ায় গড়ে ৩০ মিনিট সময় লেগে যেত, কিন্তু এই সময়টুকু কর্মীদের টাইমকিপিং সিস্টেমে রেকর্ড না থাকায় অবৈতনিক থেকে যেত।
বাদীপক্ষের দাবি, অনেক সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে আরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতো। দুপুরের খাবারের বিরতির সময় সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিত, ফলে বিরতির পর আবার লগ ইন করতে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫ মিনিট সময় লাগত—সেটিও বেতনের আওতায় আসত না। কাজ শেষে লগ আউট ও ওয়ার্কস্টেশন বন্ধ করতেও আরও ২ থেকে ৩ মিনিট লাগত, যেটির জন্যও কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি।
মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট (FLSA) অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব লেবারের ২০০৮ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, কর্মীর মূল কাজের জন্য ‘অবিচ্ছেদ্য’ এবং ‘প্রথম কাজের অংশ’ হিসেবে বিবেচিত হলে সেই সময়ের জন্যও বেতন দিতে হবে। বাদীপক্ষের দাবি, ব্যাংক অব আমেরিকার অ্যানালিস্ট ও সাপোর্ট স্টাফদের জন্য এই ডিজিটাল ওয়ার্কস্পেস চালু করাই মূল কাজের পূর্বশর্ত—তাই এটি বেতনের আওতায় পড়া উচিত।
তাভা মার্টিনের আইনি দল কয়েক শত সাবেক সহকর্মীর পক্ষে বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছে, যারা ব্যাংকের দূরবর্তী অ্যাকসেস টুল ব্যবহার করতে বাধ্য ছিলেন। মামলাটি এখন ক্লাস অ্যাকশন ও কালেকটিভ অ্যাকশন—উভয় আকারে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যাতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বঞ্চিত কর্মীরাও এতে অংশ নিতে পারেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে অনুরূপ মামলায় ভিন্ন ভিন্ন রায় এসেছে। কোথাও কম্পিউটার বুট-আপ সময়কে ক্ষতিপূরণযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, আবার কোথাও কর্মীদের পক্ষে রায় এসেছে, যদি প্রমাণ হয় যে লগ ইন প্রক্রিয়াটি মূল কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
গত ২৩ অক্টোবর ফেডারেল কোর্টে ‘মার্টিন বনাম ব্যাংক অব আমেরিকা’ নামে মামলাটি দায়ের করা হয়। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংক অব আমেরিকা এ বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেনি।
বিডি প্রতিদিন/আশিক