রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সিপাহী-১৮৫ পদের নিয়োগের ফলাফল ঘোষনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও তোলপাড় অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানাবিধ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, এ ফলাফল ঘোষনার পর থেকেই কমিটির আহবায়ক অদৃশ্য কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অফিসে দেখা যায়নি। এদিকে নিয়োগে চাকরি না হওয়া প্রার্থীরা সকাল থেকেই সিআরবিসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরছে। অনেকেই মন্তব্য করেন চাকরির জন্য কমিটির আহবায়ককে সরাসরি ও তার নিজস্ব লোকের মাধ্যমে টাকা দেয়া হয়েছে। সেগুলো এখনও পায়নি। তিনি (আহবায়ক) অফিসে আসলেই টাকা ফেরত নিতে হবে এমন তথ্যসহ বিভিন্ন সমালোচনার গুঞ্জন চলছে রেল অঙ্গনে। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন জেলায় কৌশলে লোক নেয়া হয়েছে সিপাহী পদে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রেলের হেড কোর্য়াটার সিআরবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসসহ দপ্তরের বিভিন্ন স্থানে কর্মকর্তারা আতংকিত অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া কৌশলে কমিটির অন্য সদস্যদের কাজ থেকে অনুমোদনের কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন জিএম-কমিটির আহবায়ক।
সরেজমিনে দুপুর পর্যন্ত আহবায়ককে রুমে বা সিআরবিতে দেখা যায়নি। তবে এ নিয়োগ নিয়ে কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। সিপাহী নিয়োগে অনিয়মসহ নানাবিধ বিষয়কে কেন্দ্র করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে বলে রেল ভবন সূত্রে জানা গেছে। একই সাথে দুদক, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থাও খবরাখবর নিচ্ছে বলেও সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফলাফল ঘোষনার অপেক্ষয়মান অন্য নিয়োগের মধ্যে জিএম’র নিকট আত্বীয়দের চাকরি দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। রীতিমতো জিএম’র রুম থেকে বের হয়ে কমিটির আহবায়কের রুমেও প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করছেন তিনি (জিএম)। অনেকেই মন্তব্য করেন জিএম ভেজা বিড়ালের মতো নীরবেই নানাবিধ টেন্ডারসহ অপকর্ম করছে কৌশলে। সাংবাদিকদের সাথে প্রায় সময় প্রতিনিয়ত খারাপ আচরণ করেন। পূর্বাঞ্চলের জিএম সৈয়দ ফারুক আহমেদ এবং নিয়োগ কমিটির আহবায়ক ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাহী নিয়োগের অনেক অনিয়মের চিত্রসহ নানাবিধ তথ্য অকপটে রেল অঙ্গনসহ বিভিন্ন স্থানে বলছেন হতাশাগ্রস্ত চাকুরী প্রত্যাশীরা। এসবের মধ্যে সিপাহী নিয়োগে কোটা বিভাজনে অনিয়ম, যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্বেও নেয়া হয়নি, নিয়োগ কমিটির আহবায়কের বাসা ঘেরাও, জেলা কোটায় অনিয়ম, মুক্তিযোদ্ধার চাকরি না দেয়া, টাকা নিয়ে চাকুরী না দেয়া, টাকার বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের চাকুরী দিতে জিএম-আহবায়কের গোপন বৈঠক, টাকার বিনিময়ে অনেক বিএনপি-জামায়াত সর্মথিত লোকও চাকুরী পেয়েছেন, ভিডিও ও অডিও রেকর্ড আছে এমন আলোচনায় তোলপাড় হচ্ছে রেল অঙ্গনে।
এসব বিষয়সহ আলোচিত সিপাহী নিয়োগ ও আরএনবি’র নানাবিধ বিষয়ে দুদক, গোয়েন্দা সংস্থা এবং রেলের উধর্তন কর্মকর্তাদের পৃথক তদন্ত কমিটি করলে এ নিয়োগের আসল রহস্য বের হয়ে আসবে বলে জানান একাধিক চাকুরী প্রত্যাশী। তাছাড়া সরকারের শেষ সময়ে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি ও রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আমজাদ হোসেনসহ রেল অঙ্গনকে বির্তকিত করতে একটি মহল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য ও এসপিও সিরাজুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে অনেকেই সুপারিশ করেন সবার চাকুরী তো হয় না। যারা চাকুরী পেয়েছেন তারা খুশী হবেন আর যারা পাননি তারা একটু হতাশাগ্রস্ত তো হবেই। তবে নিয়োগ বাণিজ্যের কোন অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সদস্যসহ রেলের কর্মকর্তারা বলেন, আহবায়ক এককভাবে সব তৈরি করে কৌশলে কমিটির সদস্যদের ডাকা হয়। এতে এক বছর সময় আছে বলে সবাইকে দুর্বল করে তার (আহবায়ক) ইচ্ছা মতো কৌশলে কাজ করেছেন। এখানে জিএমকে ঠিক রেখে আহবায়কের ইচ্ছা মতো কাজ করেছেন। চলমান অন্য নিয়োগেও জিএম’র আত্বীয়-স্বজনদের চাকরি দিতে কৌশলী তৎপর জিএম। তিনি (আহবায়ক) পূর্বাঞ্চলের আরএনবির প্রধান হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে কথা বলেন না। একই সাথে বিভিন্ন স্থানে টাকা সংগ্রহের জন্য বাহিনীতে আত্বীয়-স্বজন ছাড়াও নির্ভরযোগ্য সদস্য রয়েছে। তবে বিষয়টি গোপনে বিস্তারিত তদন্ত করলে অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে বলেও জানান তারা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে জনবল সংকটের কারণে শূন্য পদের বিপরীতে ২০১৭ সালে ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগের বিষয়ে নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে পত্রিকায়। প্রথমে এ নিয়োগের প্রক্রিয়া পশ্চিমাঞ্চলে হওয়ায় কথা থাকলেও কৌশলে পূর্বাঞ্চলে আনা হয়েছে। এরপর বাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনকে নিয়োগ কমিটির আহবায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে অন্যরা হলেন সদস্য সচিব কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলাম, সদস্য- কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম, এসপিও সিরাজুল্লাহ, কমান্ড্যান্ট ফুয়াদ হোসেন পরাগ। ফলাফলের তালিকা সূত্রে জানা গেছে, সিপাহী নিয়োগের ১৮৫ জনের মধ্যে চট্টগ্রামের ১১ জন, মাগুরার কোন যোগ্য প্রার্থী নেই।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর