চট্টগ্রাম নগরীতে ৫ম দিনের মতো চলেছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। বুধবার নগরীর বহদ্দার হাট ও চকবাজার এলাকায় পরিচালিত পৃথক আদালত যানবাহনের নানান ত্রুটি, ডকুমেন্ট হালনাগাদ না থাকা, ফিটনেস না থাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, হেলমেট না পড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী বহরের অপরাধে ৮৬টি মামলা দেন। এসব মামলায় এক লাখ ৫৪ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। দুই আদালত ১২টি গাড়িকে ডাম্পিং করার আদেশ দেন।
তবে প্রতিদিন ‘ত্রুটিহীন’ গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার দুই আদালত ২৫টি গাড়িকে ‘ত্রুটিহীন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ওইসব গাড়ির চালকদের গোলাপ ফুল ও ডকুমেন্ট রাখার ব্যাগ দিয়ে পুরষ্কৃত করেন। একই সাথে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে নগরজুড়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এদিকে, পুলিশের বিশেষ অভিযান ও বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের কারণে নগরীতে ফিটনেস ও কাগজপত্রবিহীন গাড়িগুলো উধাও হয়ে যায়। এতে গণপরিবহনের সংকট তৈরি হলে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে। বিশেষ করে বহদ্দারহাট এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত বসার কারণে নতুন ব্রিজ হতে দেওয়ান হাট ও কালুরঘাট হতে নিউমার্কেট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট হতে নিউমার্কেট রুটে চলাচলকারীর গাড়িরগুলোর মধ্যে ফিটনেস ও কাগজপত্রবিহীন গাড়িগুলোর উধাও হয়ে যায়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালীন সময়ে গণপরিবহন চলেছে নামমাত্র।
নগরীর চকবাজার মোড়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক। তিনি শুধু মামলা নন, নিজে দাঁড়িয়ে অবলোকন করেছেন ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালে তিনি ব্যস্ততম চকবাজার মোড়ের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি সাধারণ পথচারী ও যাত্রীরা নিয়মনীতি না মেনেই চলাচল করতে দেখে ভ্রাম্যমান আদালত নিজ থেকেই অনেককে নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করেন। এসময় তিনি চকবাজার মোড়ে দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্টকে ডেকে চকবাজারের দুই মোড়ের সিগন্যাল চালু করার নির্দেশনা দেন।
বিগত তিনদিন তিনি ‘ত্রুটিহীন’ গাড়ির চালককে চকলেট দিয়ে আসলেও বুধবার তিনি তাজা গোলাপ ফুল নিয়ে এসেছিলেন। ১২টি ফুলের মধ্যে অভিযানে ৯টি ফুল তিনি দিতে পেরেছিলেন। তবে তার আদালত দুইজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালককে আটক করেন। দুপুর দুইটার দিকে বয়স ২০ বছরের কম হলেও পেশাদার গাড়ির চালনার কারণে তিনি দুই চালককে আটক করার নির্দেশ দেন। সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ে পুনরায় আদালত বসিয়ে দুই চালকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাদের নিজ নিজ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জিম্মায় তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
আটককৃতরা হলেন- হাটহাজারির নুরুল আলিমের ছেলে মামুনুর রশিদ। তাকে চট্টগ্রাম যাত্রীসেবা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের জিম্মায় মুক্তি দেন। অন্যদিকে, ভোলা জেলার রামগঞ্জ এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে পিকআপ চালক মোহাম্মদ নাঈমকে চট্টগ্রাম পিকআপ চালক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীনের জিম্মায় মুক্তি দেয়া হয়। এসময় তারা পেশাদার চালক হওয়ার জন্য নিম্ন ২০ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত এবং পরে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি না চালানোর ব্যাপারে আদালতের কাছে অঙ্গীকার করেন।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বহদ্দার হাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীরের আদালত ৪৬টি গাড়িকে মামলা দেন। মামলার বিপরীতে তার আদালত এক লাখ ১০ হাজার ৩শ টাকা জরিমানা আদায় করেন। ওই আদালত ১০টি গাড়িকে ডাম্পিং করার আদেশ দেন। পাশাপাশি ২২টি গাড়ির ডকুমেন্ট জব্দ করেন। তিনি ‘ত্রুটিহীন’ চিহ্নিত করে ১৬ জন চালককে ব্যাগ প্রদান করেন।
অন্যদিকে চকবাজার মোড়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক। তিনি ৪০টি গাড়িকে মামলা দেন। বিপরীতে ৪৪ হাজার ৬শ টাকা জরিমানা আদায় করেন। ওই আদালত দুইটি গাড়িকে জব্ধ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানোর আদেশ দেন। দুটি গাড়ির ডকুমেন্ট জব্দ করেন। তাছাড়া তিনি ‘ত্রুটিহীন’ ৯ গাড়ি চালককে গোলাপ ফুল দিয়ে অভিনন্দিত করেন।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের সুফল ইতিমধ্যে নগরবাসী পেতে শুরু করেছে। শুধু মামলা দেয়া এ অভিযানের লক্ষ্য নয়। মূলত মানুষদের সচেতন করার জন্যই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়।’
নগরীতে গণপরিবহন সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের কারণে কাগজপত্রবিহীন গাড়িগুলো চালক-মালিকরা রাস্তায় নামাচ্ছে না। অভিযান ধারাবাহিক চলবে। কিন্তু মালিকরা ততোদিন গাড়িগুলো বন্ধ রাখবে না। এরমধ্যেই তারা গাড়ির ডকুমেন্টগুলো হালনাগাদ করিয়ে নেবেনে। ইতোমধ্যে বিআরটিএ-তে চালক-মালিকরা ভীড় করছেন।’
ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের ভোগান্তিও সাময়িক। ধীরে ধীরে রাস্তায় ভাল গাড়িগুলো চলবে। আস্তে আস্তে মানুষের ভোগান্তি কমে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘চকবাজারের মতো ব্যস্ততম মোড়ে কোন জেব্রা ক্রসিং নেই। দুটি মোড়ে দুইজন করে ট্রাফিক হাত দিয়ে গাড়ি আটকান। লোকজন যে যার মতো করে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। যে যেভাবে মনে করছে গাড়ি এদিক ওদিক ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য সচেতনতা জরুরি।’
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ