দেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরের প্রাণ কর্ণফুলী নদী। কিন্তু এই কর্ণফুলী নদীতেই ফেলা হচ্ছে তৃতীয় শাহ্ আমানত সেতুর (কর্ণফুলী সেতু) ওপর জমে থাকা ময়লা আবর্জনা। ফলে দুষণ হচ্ছে কর্ণফুলী।
শুক্রবার এমন চিত্র দেখা যায়।
অভিযোগ আছে, এমনিতেই নগরের শিল্প ও আবাসিক বর্জ্যরে দূষণে নাভিশ্বাস নদীটির। এর সঙ্গে আছে দখলের প্রতিযোগিতা। এসব কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ নদীটির করুণ দশা। এখন সেতুর ময়লা নদীতে ফেলার কারণে মরণ দশা আরো কাছে টানবে ক্রমশ।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫-৩০ জন শ্রমিক সেতুর ওপর জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করছেন। শ্রমিকরা সেতুর ময়লা নিয়ে তা সরাসরি ফেলছেন নদীতে।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কর্ণফুলী সেতুর ওপর জমা হওয়া ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে থাকি। এসব ময়লা ভ্যান গাড়িতে করে অন্যত্র নেওয়ার কথা। সেতুর ময়লা নদীতে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। এখন যদি সেতুর ময়লা নদীতে ফেলা হয় তাহলে সেটা অন্যায়। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখনই এ ব্যাপারে খবর নিচ্ছি।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এমনিতেই নগরের আবাসন ও শিল্প বর্জ্যে কর্ণফুলী নদীর করুণ অবস্থা। তাই নদীতে সেতুর ওপর জমা আবর্জনা ফেলা উচিত হবে না। যদিও শিল্প বর্জ্যরে তুলনায় এসব বর্জ্য নগন্য। তবুও সেতুও আবর্জনাগুলো এক সঙ্গে জমা করে আগুনে পুড়ে ফেলা উচিত।’
জানা যায়, অত্যন্ত ব্যস্ততম কর্ণফুলী সেতু দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আটটি উপজেলা এবং কক্সবাজার-বান্দরবানের অসংখ্য গাড়ি এ সেতু দিয়েই চলাচল করে। কর্ণফুলী উপজেলা এবং নদীর কাছের ওপারের অনেক বাসিন্দা পায়ে হেঁটেই সেতু পার হয়। তাছাড়া প্রতি শুক্রবার-শনিবার, সরকারি ছুটির দিন এবং প্রতিদিন বিকালে অসংখ্য পর্যটক সেতুতে বেড়াতে যান। আবার আশপাশের অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও বেড়াতে আসেন এ সেতুতে। এ সব কারণে প্রতিদিনই এই সেতুতে জমে বালি, কলার খোসা, চিপসের প্যাকেট, বাদামসহ নানা ধরণের ময়লা। কিন্তু এসব ময়লা পরিস্কার করে তা ফেলা হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীর দুই পাড়ে ২ হাজার ১৮১ জন দখলদার বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে আরএস রেকর্ড মূলে কর্ণফুলী নদীর বাকলিয়া ও পূর্ব পতেঙ্গা মৌজায় সর্বমোট ২১১২ জন অবৈধ দখলদার এবং বিএস রেকর্ড মূলে বাকলিয়া, মাদারবাড়ি, গোসাইলডাঙ্গা, মনোহরখালি, ফিরিঙ্গি বাজার মৌজায় সর্বমোট ৬০ জন অবৈধ দখলদার আছেন। কর্ণফুলীর তীরে মোট ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমিতে স্থাপনা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এ ভূমির মূল্য দুই হাজার ৩৭০ কোটি। পক্ষান্তরে কর্ণফুলী নদী দূষণে প্রতিনিয়তই হুমকির মুখে প্রাণীবৈচিত্র। অতীতে এ নদীতে ৬৬ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ৫৯ প্রজাতির মিশ্র পানির এবং ১৫ প্রজাতির সামুদ্রিক পরিযায়ী মাছ পাওয়া যেত। এখন ২০-২৫ প্রজাতির মিঠা পানির এবং ১০ প্রজাতির মিশ্র পানির মাছ প্রায় বিলুপ্ত। তাছাড়া হুমকিতে আছে আরও ২০ প্রজাতির মাছ। কর্ণফুলী নদী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মাছের মধ্যে রয়েছে ফাইস্যা, কাঁচকি, রুপচাঁদা, কালিচাঁদা, পাঙাশ, বাচা, ভেটকি, পাশা, লইট্টা, রিকশা, মধু, পাবদা, পোয়া, মহাশোল ইত্যাদি। এছাড়া কাতলা, রুই, মৃগেল মাছও কমতে শুরু করেছে বলে জানা যায়।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন