২২ জুন, ২০১৯ ১৯:৫৩

আওয়ামী লীগ এমপির শ্বশুরের জানাজায় ছাত্রলীগ-শিবিরের মারামারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

আওয়ামী লীগ এমপির শ্বশুরের জানাজায় ছাত্রলীগ-শিবিরের মারামারি

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের মাঠে (প্যারেড গ্রাউন্ড) জামায়াত নেতা মুমিমুল হক চৌধুরীর জানাজা ঘিরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। জানাজায় অংশ নিতে আসা শিবিরের নেতাকর্মীদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিতে জড়ো হলে মারমুখী অবস্থান নেন শিবিরের নেতাকর্মীরাও। এ সময় উভয়পক্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু করলে পুলিশের হস্তক্ষেপে বড় ধরনের সংঘাত থেকে রক্ষা পায় ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা।

শনিবার দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাস ও আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে চট্টগ্রাম কলেজ মাঠে জামায়াত নেতার জানাজার অনুমতি দেওয়ায় অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরী বার্ধক্যজনিত কারণে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর শ্বশুর। 

এদিকে, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাসান জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সংসদ সদস্য নদভী তাকে টেলিফোন করে প্যারেড মাঠে তার শ্বশুরের জানাজার জন্য সিএমপি কমিশনারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি কলেজের মাঠে জানাজায় সহযোগিতা করতেও অনুরোধ করেন। সে সময় কলেজের অডিটোরিয়ামে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলছিল। সংসদ সদস্যের ফোন পেয়ে অধ্যক্ষ অনুষ্ঠানে সমবেত শিক্ষকদের প্যারেড মাঠের জানাজায় অংশ নিতে অনুরোধ করেন।

এ সময় অনুষ্ঠানে থাকা কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতা জানান, অধ্যক্ষের ঘোষণার পরই মূলত কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন। এ সময় তারা উত্তেজিত হয়ে উঠেন। দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে কয়েক দফা মিছিল করে ছাত্রলীগ। প্যারেড মাঠে জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকে দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে উঠেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি-লোহার রড নিয়ে প্যারেড মাঠের কাছে ছাত্রাবাসের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা জানাজার দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। অন্যদিকে জানাজাস্থল থেকে শিবিরের একদল নেতাকর্মীও মারমুখী হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে এগিয়ে আসে। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও উভয়পক্ষ মারামারিতে জড়ায়। তবে পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপের কারণে বড় ধরনের সংঘাত হয়নি। তবে দুই/একজনের মাথা ফাটার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ বলেন, জানাজার নামে ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্যারেড মাঠে হাজির হয়। এ সময় তিনজন শিবির ক্যাডার রায়হান, জোবায়ের ও হান্নান তাদের নেতৃত্বে ছিল। আমরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় দেখি জোবায়েরের সঙ্গে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হাসিমুখে কথা বলছেন। তখন ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে একজন এসআই আমাদের এক নেতাকে ধাক্কা দেন। শিবিরের সন্ত্রাসীরাও এসে তাদের শক্তি দেখানোর চেষ্টা করে। ফলে আমরাও তাদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিই।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, যেহেতু উনি (মুমিনুল হক) জামায়াত নেতা, শিবিরের ছেলেরাও এসেছিল। ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে মাঠের দিকে আসতে চাইলে উভয়পক্ষ মারমুখী হয়ে ওঠে। তবে আমরা মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য সাংসদ নদভী সাহেব প্যারেড মাঠ এলাকায় এলেও পরে যোগ দেননি। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ভেতরেও যাননি।

ছাত্রলীগ নেতা সুভাষ মল্লিক বলেন, জানাজা শেষে আমরা অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা বলেছি-একজন চিহ্নিত জামায়াত নেতা, যার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের অভিযোগ আছে, যিনি ফাঁসির পরে যুদ্ধারপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেছিলেন, তার জানাজার অনুমতি অধ্যক্ষ কিভাবে দিলেন? তখন চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।  

বিডি-প্রতিদিন/২২ জুন, ২০১৯/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর