মহামারী করোনা পরিস্থিতিকে পাত্তাই নিচ্ছেন না চট্টগ্রামের ক্রেতারা। রমজানের ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে জেনেও সেই করোনাভাইরাসের কারণে দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানাবিধ দিক বিবেচনা করেই চট্টগ্রাম নগরীর মার্কেটগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন।
নগরীর তামাকুমন্ডি লেইন মার্কেট সমিতির আওতাধীন রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ ১১০টি মার্কেট রয়েছে। এখানে নানা কারণে অনেক মালামাল নষ্টের পথে রয়েছে। এসব মার্কেট বন্ধের মধ্যেও নগরীর কিছু কিছু এলাকায় ফুটপাথে দোকান বা মার্কেট বসিয়ে ক্রেতাদের ভিড় জমাচ্ছেন। তাছাড়া জেলার পটিয়া, হাটহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়িতেও দোকান মার্কেট খোলা রয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলা হলেও মানছেন না সরকারি নির্দেশনা। এসব বিষয়ে নগরীর মার্কেট সমিতির নেতারা এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা কঠোর নজরদারিতে রেখে নিয়মিত মনিটরিং করছেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোধে চট্টগ্রামের সকল মার্কেট বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামের দোকান মালিক সমিতি। কিন্তু রেয়াজ উদ্দিন বাজারসহ নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে মার্কেট বা দোকান খোলা রেখেছে। তাছাড়া মহামারী এই সমস্যার মধ্যেও প্রকাশ্যে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায় লক্ষণীয়। বিশেষ করে নারী ক্রেতাদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি এই দোকানগুলোতে। এখানে মানা হচ্ছে না সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বও।
চট্টগ্রাম তামাকুমন্ডি লেইন ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির আওতাভুক্ত প্রায় ১১০টি মার্কেট রয়েছে। এখানে জরুরি শিশুখাদ্য, শুকনো খাবার, প্যাকেটজাত পচনশীল খাবারসহ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে অনেক পন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে বিক্রয় অযোগ্য হওয়ার পথে। ১৩ হাজার ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘিরে প্রায় ৫০ হাজার কর্মচারী, শ্রমিক ও প্রহরীর কর্মসংস্থান অনিশ্চয়তার মুখে।
তিনি বলেন, বিগত দেড় মাসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা লোকসানে আছে। এতে বাজারে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০ মে থেকে মার্কেট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণ কোনো মতে সম্ভব নয়, এটা ভেবে করোনা সংক্রমণ রোধে ঢাকার সাথে চট্টগ্রামে সব মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
তারা বলেন, মার্কেট খুললেও কয়দিন খোলা রাখতে পারব? যতই বলা হোক না কেন, ঈদ-বাজারে কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে না। শুরুতেই দোকানিরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবেন, সংস্পর্শে পুরো চট্টগ্রাম হবে। এরপর মার্কেটগুলোও লকডাউনের মুখে পড়তে পারে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার নির্দেশনা মেনে চলার জন্য প্রশাসন কাজ করছেন। তাছাড়া মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করেছেন। তাছাড়া সামাজিক দূরত্ব যারা মানছেন না, তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে এবং নিয়মিত সবখানে মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সবকটি মার্কেট বন্ধ রয়েছে। কিন্তু খুলেছে সবগুলো পথ দোকান। যেখানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। আর এতে করোনা সংক্রমণ রোধ কতটুকু হবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। নগরীর আগ্রাবাদ, চকবাজার, বহদ্দারহাট, পাহাড়তলী, খুলশী, হালিশহর, সদরঘাট, মুরাদপুর, নিউমার্কেট মোড়, জিইসির মোড়ের আশপাশের সবগুলো কাপড় ও প্রসাধনীর দোকানপাট খুলেছে। যেখানে কেনাকাটা করার জন্য ক্রেতারা আসছে। এর মধ্যে নারী ক্রেতাই বেশি। বিশেষ করে প্রবাসীদের স্ত্রীরা ছোট ছোট সন্তান-সন্ততি নিয়ে কেনাকাটা করতে আসছেন। সেখান থেকে অবাধে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস। চট্টগ্রামের সানমার ওশান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, কল্লোল সুপার মার্কেট, আমিন সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, খুলশী কনকর্ড টাউন সেন্টার, আকতারুজ্জামান সেন্টার ও বনানী সুপার মার্কেট, মতি টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেট, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, টেরিবাজার, হকার মার্কেটসহ অনেক মার্কেট বন্ধ।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম