সুপার সাইক্লোন আম্ফানের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে রেড অ্যালার্ট ৪ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে স্ট্যান্ডবাই থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকাল থেকে আবহাওয়া অফিস ৯ নম্বর বিপদ সংকেট দেখিয়ে যেতে বলার পর বন্দরের অ্যালার্ট বৃদ্ধি করে ৩-এর পরিবর্তে ৪-এ নিয়ে আসা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম ও উদ্ধার টিম। খোলা হয়েছে ৩টি কন্ট্রোল রুম। পতেঙ্গা ও উত্তর কাট্টলি এলাকার জেলারা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। এছাড়া নিম্নএলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার কাজও করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আম্ফানের সম্ভাব্য আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিগুলোও জাহাজশূন্য করা হয়েছে মঙ্গলবারেই। ‘বুম আপ’ বা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ১৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের যন্ত্রপাতি। এর আগে সোমবারে বহির্নোঙরে জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়। ঝুঁকি এড়াতে লাইটার জাহাজগুলো কর্ণফুলীর উজানে এবং বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজগুলোকে গভীর বঙ্গোপসাগরের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের তথ্যমতে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বড় জাহাজকে সাগরে পাঠানো হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু ঘুর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলার কাজে নিয়োজিত আছে।
তিনি বলেন, সাগরে পানির লেভেল ২ মিটারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। যা জোয়ারের সময় আরও বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বাংলাদেশ উপকূলের কাছাকাছি চলে আসার পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বন্দরে চার মাত্রার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জাহাজ না থাকায় এবং অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দর।
এদিকে বুধবার সকালে মহাবিপদ সংকেত জারির পর চট্টগ্রাম বন্দরে নিজস্ব চার মাত্রার সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সার্বক্ষণিকভাবে চালু আছে। বেলা ১২টার দিকে বন্দরের জেটি পরিদর্শন করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম বলেন, ‘মূলত অ্যালার্ট থ্রি জারির পরই চট্টগ্রাম বন্দরের সব অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। অ্যালার্ট-ফোর মানে হচ্ছে সর্বোচ্চভাবে মোকাবিলার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখা। এখন বন্দরে কোনো জাহাজ নেই। বহির্নোঙ্গরেও জাহাজ নেই। লাইটারেজ জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদীতে শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণে নেওয়া হয়েছে। বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আগে বুকিং থাকা কিছু কিছু কনটেইনার এখনও ডেলিভারি হচ্ছে। তবে সেটা সংখ্যায় খুবই নগণ্য।
আগে মঙ্গলবার (১৯ মে) সকালের জোয়ারে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজশূন্য করা হয়। জেটি থেকে ১৯টি এবং বহির্নোঙ্গর থেকে ৬৭টি জাহাজ সরিয়ে সেন্টমার্টিন উপকূলে পাঠানো হয়। এছাড়া প্রায় ৫০০ লাইটারেজ জাহাজকে কর্ণফুলী নদীতে শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণে পাঠানো হয়েছে। জেটিতে যেসব গ্যান্ট্রি ক্রেন ও আনুষাঙ্গিক ভারি যন্ত্রপাতি আছে সেগুলোকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া নিজস্ব নৌযানগুলোকে নিরাপদ স্থানে নোঙ্গর করা হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে জেটির সর্বশেষ জাহাজটি বহির্নোঙরে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জেটিতে কোনো জাহাজ নেই। তবে ইয়ার্ড থেকে কনটেইনার ডেলিভারি এখনও দেয়া হচ্ছে। এমনিতেই করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজজট চলছিল তার উপর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সম্ভাব্য হানা বন্দরের এই জটকে আরো দীর্ঘায়িত করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া আসন্ন ঈদের কারণেও বন্দরে কার্যক্রমে ধীরগতি নেমে আসে। সবমিলে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রয়েছে বলে জানান বন্দর কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্ক সংকেত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অ্যালার্ট-৪ জারি করেছে। তিনটি কনট্রোল রুম (নৌ বিভাগ-০৩১-৭২৬ ৯১৬, পরিবহন বিভাগ-০৩১- ২৫১৭৭১১, সচিব বিভাগ -০১৭৫১ ৭১ ৩০ ৩৭) খোলা হয়েছে। সবমিলে আমরা সব ধরনের সতর্কতামূল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার