করোনা পরিস্থিতির কারণে আসন্ন কোরবানির ঈদেও এবার চট্টগ্রামে আমেজহীন হওয়ার আশঙ্কা। এর আগে রমজানের ঈদে দেশে তথা চট্টগ্রামে কোন ধরনের আমেজ ছিল না দৃশ্যমান। করোনার প্রার্দুভাব দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার কোরবানিও হতে পারে সীমিত পরিসরে।
তাছাড়া কোরবানি করা-না করা নিয়ে ক্রেতাদের এবং আগের মতো বাজারে তেমন গরু, মহিষ, ছাগল বিক্রয় করছেন কিনা সেই নানাবিধ শঙ্কায় ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে নানা সংকটের মধ্যেও গত বছরের মতোই চট্টগ্রামে পশু জবাই হতে পারে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী নেতা মোজাম্মেল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক সংকটসহ ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির কারণে। লোকসানও করেছেন শত শত ব্যবসায়ীরা। রমজানের ঈদে অনেকেই নিজ বাড়িতে ঈদও করতে যাননি সাধারণ ব্যবসায়ীরা। সেই হিসেবে এবার কোরবানির ঈদেও আগের বছরের তুলনায় এবার বাজেট কমিয়ে কোরবান করবেন অধিকাংশ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। আবার সাধারণ মানুষের অনেকেই ব্যাপক আর্থিক সংকটে কোরবানি নাও করতে পারেন।
শুলকবহর এলাকার বাসিন্দা ও রিডার্স স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন কাদের লাভলু বলেন, গতবারের তুলনায় এবার পশুর হাট তেমন জমজমাট হবে না। ক্রেতাও তেমন দেখা যাবে না। কোরবান ঘনিয়ে আসলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের তেমন দৃশমান সেই আমেজ নেই বললেই বলে। দেড়-দু মাস আগে থেকে চট্টগ্রাম নগরীর সেই বিবির হাট ও সাগরিকা গরুর বাজারে ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্যণীয় থাকে। সেই ভীড় বা তেমন বাজারও নেই এখন। তবে এবার আগের তুলনায় প্রতিটি পশুর দাম কমিয়ে না আনলে কোরবানি করা কঠিন হবে অনেকেই।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসিম বলেন, গত বছর ৭ লাখ ২০ হাজার ৭৮৯টি পশু জবাই করা হয়েছে কোরবানিতে। এবারও সমসংখ্যক পশু জবাই করা হবে। এবার ৬ লাখের বেশি পশু স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করা হয়েছে। নানা সংকটের মধ্যে পশুর বাজার ঠিক থাকবে। এতে সবমিলে কোরবানিতে পশুর সংকট হবে না বলে জানান তিনি।
রাউজানের গরু ব্যবসায়ী নাসিম বলেন, এবার কোরবানিতে হাট-বাজারে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করবে না ক্রেতা। পাড়া গাঁ বা খামার থেকে কেনার আগ্রহ বেশি থাকবে। খামারে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে। ইতোমধ্যেই অনলাইনে অনেকে সাড়া দিয়েছেন। খামারে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই কোরবানির পশু বিক্রি করা হবে। একই কথা বললেন নগরীর গরু ব্যবসায়ী দেলোয়ারও।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী হাজি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর কোরবানিতে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দরে চারটি গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন। এবার একটি কমিয়ে এনে তিনটি গরু কেনার বাজেট করেছেন। করোনার কারণে এবার দুই দফায় ১৩-১৪ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। ঈদেও রাজনৈতিক সহকর্মী ও গবিরদের মধ্যে ঈদসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। সবমিলে প্রায় কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে কোরবানি দেওয়া তিনটি গরু এবার গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিলি-বন্টন করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, প্রতিবছর নিজ গ্রামের বাড়িতেই ঈদ করেছিলাম। এবার করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। তবে কোরবানির তেমন আমেজ নেই। এতে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি। তিন মাসের লকডাউনে দেশে অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট বন্ধ ও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ শত শত লোক কর্মহীন। কষ্টে দিনযাপন করছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
রাঙ্গুনীয়ার বাসিন্দা ও শাহ আমানত সিটি করপোরেশন মাকের্টের ব্যবসায়ী আবুল মুনছুর চৌধুরী বলেন, এবারের পরিস্থিতির কারণে হাট-বাজার নিরাপদ মনে করছি না। মনে হচ্ছে পাড়াগাঁয়ে ভালো গরু বেচাকেনা হবে। তারপরও পরিস্থিতি অনুধাবন করে কোরবানি ঘনিয়ে আসলে চিন্তা-ভাবনা করবেন বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, গত এক বছর ধরে কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছোট-বড় খামারি থেকে শুরু করে ব্যক্তি উদ্যোক্তরা। লালন-পালন করেছেন শত শত কোরবানির পশু। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ও কোরবানিযোগ্য অন্যান্য প্রাণী। প্রতিবছর কোরবানিতে বড় অবদান রেখে আসছে। কোরবানির গরু হাট-বাজারে নেই।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন