বাগদা চিংড়ি উৎপাদন ও রফতানি বাংলাদেশ এক সময় শীর্ষ পর্যায়ে থাকলেও সমুদ্র থেকে মাদার চিংড়ি সংগ্রহ ও হ্যাচারিতে পরিবহনের নানান জটিলতায় সংকটের মুখে পড়েছে খাতটি। স্বাস্থ্যবান ও গুনমান সম্পন্ন পোনা উৎপাদনের জন্য প্রতিটি ধাপে সঠিক মাননিয়ন্ত্রণ ও মাদার চিংড়ির নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হলেও স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যবস্থাপনায় রুগ্ণ পোনা উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশ চিংড়ি উৎপাদন ও বিপণনে পিছিয়ে পড়ছে। সংকট উত্তরণে সমুদ্র থেকে মাদার চিংড়ি সংগ্রহে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদফতর, শ্রীম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব) ও সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া আয়োজিত ‘ভালো মা চিংড়ি সংগ্রহের কৌশল, তদারকি, পরিবহন ও ব্যস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সেব এর সচিব মো. নজিবুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক (মেরিন) একে এম শফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদফতরের উপ পরিচালক (চিংড়ি) মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী ও উপ পরিচালক (অর্থ ও পরিকল্পনা) হাসান আহমেদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন কালে মো. নজিবুল ইসলাম বলেন, হ্যাচারিতে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের পূর্বে গভীর সমুদ্র থেকে মাদার চিংড়ি আহরণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমুদ্র থেকে মাদার চিংড়ি সংগ্রহের পর হ্যাচারিতে পৌঁছানো পর্যন্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ধাপ অতিক্রম করতে হয়। স্বাস্থ্যবান ও গুনগতমান সম্পন্ন পোনা উৎপাদনের জন্য প্রত্যেকটি ধাপেই সঠিক মাননিয়ন্ত্রণ ও মাদার চিংড়ির নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন। কিন্তু খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক জটিলতায় মানসম্মত মাদার চিংড়ি সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এতে দেশের চিংড়ি উৎপাদন খাতও বিপাকে পড়ছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে একেএম শফিকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের হ্যাচারি শিল্পকে রক্ষায় রোগ-পীড়ন মুক্ত পোনা উৎপাদন জরুরী। এজন্য মানসম্মত ভাবে মাদার চিংড়ি সংগ্রহ পরিচর্যা ও পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মাঠ পর্যায়ের চিংড়ি সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে বাংলাদেশে চিংড়ি উৎপাদন ও রফতানি খাতে আগের অবস্থান ফিরে পাবে বলে আশা করেন তিনি।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য অধিদফতরের উপ পরিচালক (অর্থ ও পরিকল্পনা) হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, চিংড়ি বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিকৃত মৎস্য পণ্য। বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি শিল্পের উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ির জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৯ অনুমোদন করেছে। এই প্রেক্ষিতে মৎস্য অধিদপ্তরের সক্রিয় সহযোগিতায় উন্নয়ন সহযোগী সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া চিংড়ি সেক্টরের অন্যান্য অংশীজনদেরও পরামর্শ নিয়ে ‘বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি হ্যাচারি পরিচালনার আদর্শ পদ্ধতি নির্দেশিকা’ শিরোনামে একটি এসওপি প্রস্তুত করেছে। এই নির্দেশিকা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ চিংড়ি উৎপাদন খাতে পূর্বের অবস্থান ফিরে পাবে বলে আশা করেন তিনি।
সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার টিম লিডার মঈনউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ট্রলারের ক্যাপ্টেন, ট্রলার মাস্টার ও ডেক হ্যান্ড প্রতিনিধিরা তাদের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা, মতামত ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন