চট্টগ্রামে নদী-খালে মিলছে একের পর এক লাশ। উদ্ধার হওয়া প্রায় লাশই অর্ধগলিত। যার উল্লেখযোগ্য এখনো ক্লু-লেস। এমনকি লাশের পরিচয় পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিত খুনের পর গোপন স্থানে রেখে পচিয়ে ফেলা হচ্ছে লাশ। এরপর সাধারণ মৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দিতে অর্ধগলিত লাশ ফেলা হচ্ছে খাল ও নদীতে।
চট্টগ্রাম নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার ওসি এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বছর জানুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত খাল ও নদী থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করে সদরঘাট নৌ পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রতিটি লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরই মধ্যে আসা দুটি ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ আঘাতজনিত উল্লেখ করায় তা হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে। নদী-খাল থেকে লাশ উদ্ধারের প্রতিটি ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুর আসল কারণ জানতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করছি।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকার খাল-নদী এবং ছড়া থেকে গত এক বছরে কমপক্ষে ৪০টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যার সিংহভাগের পরিচয় ছিল অজ্ঞাত এবং লাশগুলো ছিল অর্ধগলিত। মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায় বিভিন্ন নদী, খাল ও ছড়া থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের অবস্থা প্রায় অভিন্ন। প্রায় লাশ ছিল অর্ধগলিত। মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে খুনের পর কয়েকদিন গোপন স্থানে রেখে পচিয়ে ফেলা হয়েছে লাশ। এরপর সাধারণ মৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দিতে পচা লাশ ফেলা হয় নদী ও খালে। হালিশহর থানার সাগরপাড় এলাকা থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এক বছর হলেও এখনো লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে হালিশহর থানার ওসি (তদন্ত) আল মামুন বলেন, ‘ওই লাশের বিষয়ে কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। লাশের পরিচয় নিশ্চিত ও আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ।’
২০ মার্চ কর্ণফুলীর শাখা খাল শিকলবাহার কালারপুল ব্রিজ এলাকা থেকে আবুল কালাম (৬০) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৯ মার্চ শিকলবাহার ভেল্লাপাড়া থেকে অর্ধগলিত অজ্ঞাতনামা (৪০) এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালী উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা ভারাম্ভা খাল থেকে ফৌজিয়া ফারিহা রাফি নামে এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী নদীর ৫ নম্বর জেটি এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর লোহাগাড়ার হাঙর খাল থেকে মেঘনাথ দে নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৮ আগস্ট কর্ণফুলীর ফিশারিঘাট এলাকা থেকে ফাইয়াজ নুর নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ জুলাই উত্তর কাট্টলীর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে অর্ধগলিত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৪ জুন হালদা নদীর উত্তর মাদার্শা থেকে অর্ধগলিত এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৩ মে কর্ণফুলীরর চরণদ্বীপ থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩১ মার্চ হালিশহর চৌধুরীপাড়া সাগরপাড় এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।