২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১৮:২৭

গুরুর মর্যাদা’র লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ

মুহাম্মদ সেলিম ও ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

গুরুর মর্যাদা’র লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ

ঐতিহাসিক জব্বারের বলি খেলার ১১৫তম আসর ছিল ‘গুরুর মর্যাদার’ লড়াই! এ আসরের চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট শাহ জালাল ও তারেকুল ইসলাম জীবন ‘ম্যাচ’ ছেড়ে দিয়ে আর্শীবাদ করেন দুই শিষ্য বাঘা শরীফ ও মোহাম্মদ রাসেলকে। 

গুরুর আর্শিবাদ পেয়ে দুই বলি হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য। চ্যালেঞ্জিং রাউন্ড, সেমিফাইনালে একের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে উঠেন ফাইনালে। উত্তেজনাপূর্ণ শ্বাসরুদ্ধকর ‘অল কুমিল্লা’ ফাইনালে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও এক পর্যায়ে সিনিয়র বাঘাকে স্বেচ্ছায় ম্যাচ ছেড়ে দেন রাসেল। এতে করে জব্বারের বলি খেলায় প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার বাঘা শরীফ।

‘অল কুমিল্লা’ ফাইনালে মুখোমুখী হয় বাঘা শরীফ ও মোহাম্মদ রাসেল। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ ম্যাচে দুই বলির চলে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। ১২ মিনিট এ ম্যাচে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। কৌশল পাল্টা কৌশলে চলতে থাকে কসরত। সেয়ানে সেয়ানে চলতে থাকা লড়াইয়ে এলাকার ‘সিনিয়র ভাই’ বাঘা শরীফকে ম্যাচ ছেড়ে দেয় রাসেল। এ ঘোষণার সাথে সাথে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন বাঘা। 

এর আগে বাঘা শরীফ ও রাশেদের মধ্যে প্রথম সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। দুই মিনিটের মধ্যেই কুমিল্লার আরেক বলি রাশেদকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেন বাঘা শরীফ। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট সৃজন চাকমাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেন মোহাম্মদ রাসেল। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা পরাজিত করেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মোহাম্মদ রাশেলকে। 

এর আগে চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে গত বারের সেমিফাইনালিস্ট নুর আহম্মদকে সহজে পরাজিত করে সেমিফাইনালে ওঠেন বাঘা শরীফ। রাশেদ পরাজিত করেন বাবুধনকে। রাসেল পরাজিত করেন লিংকনকে। সৃজন চাকমা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিযোগীকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে উঠেন। 

এর আগে চ্যালেঞ্জিং রাউন্ডে দুই বারে চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল বলি এবং এক আসরের চ্যাম্পিয়ন তারেকুল ইসলাম জীবন বলি নিজ নিজ অনুসারী বাঘা শরীফ ও রাসেলকে আর্শীবাদ হিসেবে ম্যাচ ছেড়ে দেন। বিজয়ীদের ট্রফি ও অর্থ তুলে দেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। 

এর আগে বলি খেলার উদ্বোধন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। ফাইনালে বিচারক হিসেবে ছিলেন হাফিজুর রহমান। এছাড়া বিচারক হিসেবে ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর মুহাম্মল জামাল হোসেন, সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ বলেন, ‘আমি প্রথমবার খেলতে এসেছি। গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল ভাই আমার গুরু। তিনি না খেলে আমাকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। উনি অনেক বড় মনের মানুষ। আপনারা উনার জন্য দোয়া করবেন।’

রাসেল বলেন, ‘বাঘা শরীফ আমার সিনিয়র। তিনি অনেক দিন ধরে খেলছেন। তাই সিনিয়রকে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছি।’

শিষ্যর জন্য গুরুর বিষর্জন

আবদুল জব্বারের বলি খেলার টানা তিন আসরের ফাইনালিস্ট কুমিল্লার শাহ জালাল ও তারেকুল ইসলাম জীবন জব্বারের বলি খেলার এ আসরের অন্যতম হট ফেরারিটও ছিলেন তারা। কিন্তু শিষ্য বাঘা বলি ও এবং রাসেল জন্য নিজেদের বির্জন দেন এ দুই গুরু। গুরুর বিসর্জন শিষ্যদের জন্য ‘সাপে বর’ হিসেবেই এসেছে। ১১৫ তম আসরে দুই জনই ফাইনালেস্ট উঠেছে। শেষ পর্যন্ত রাসেল ম্যাচ থেকে সরে দাড়ানোই নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাঘা শরীফ। 

সত্তরোর্ধ্ব দুই বলি লড়াইয়ে হারেনি কেউ

খাজা আহমদ ও মফিজ বলি। দুইজনই অংশ নিয়েছেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের ১১৫তম বলি খেলায়। তবে দেড় দশক ধরে কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। যৌথভাবে সত্তরোর্ধ্ব দুই বলিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে আয়োজক কমিটি। ঐতিহাসিক জব্বারের বলি খেলার মূল আকর্ষণ ছিলেন এ দুই বলি। বিগত প্রায় ১৫-২০ বছর থেকে দুইজনই লড়ে আসছেন একে অপরের সাথে। ৭২ বছর বয়সী মফিজ বলি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা ও ৭০ বছর বয়সী খাজা আহমদ বলি নগরীর পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। বলি খেলার মূল মঞ্চে দুইজনই উঠার সাথে সাথে দর্শকদের করতালিতে তাদের স্বাগত জানান। এ সময় বয়োবৃদ্ধ দুই বেশ কিছুক্ষণ শারীরিক কসরত করে দর্শকদের আকর্ষণ করেন। এরপর বলি শুরুর সাথে সাথে একে অপরের সাথে কুস্তিতে মেতে উঠেনে। বিগত সময়ের মতো এবারও কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারেননি। এবার দুইজনই যৌথভাবে বিজয়ী করা হয় এবং দুইজনকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মকে উৎসাহ দেওয়ায় ধন্যবাদ জানানো হয়।

১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনে যুবক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে  বলিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলি’।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর