সাইটসেভার্স'র অ্যাডভোকেসি এন্ড কমিউনিকেশন কোঅর্ডিনেটর আলিম বারী বলেছেন, দেশে ৯৭ ভাগ মানুষ পানি সুবিধা পেলেও বিশুদ্ধ পানি পায় মাত্র ৩৭ ভাগ মানুষ। বন্যার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত মানুষ মারা যায় তারচেয়ে বেশি মারা যায় বন্যা পরবর্তী বিশুদ্ধ পানির অভাবে। দূষিত পানির কারণে সৃষ্ট জটিলতায় গর্ভবতী মায়ের গর্ভের সন্তান পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই বিষয়টা নিয়ে পলিসি লেবেলে গুরুত্বসহকারে চিন্তা করা দরকার।
ইডব্লিউএমজিএল'র কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত 'নিরাপদ পানি: সমস্যা ও করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজামের স্বাগত বক্তৃতার মধ্যে দিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। নঈম নিজাম বলেন, ছোটবেলা থেকে পড়ে এসেছি 'পানির অপর নাম জীবন'। কিন্তু এখন পানিকে কতটা জীবন বলা যায়? কতটুকু নিরাপদ পানি আমরা পান করছি? নগরে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তা কতটুকু নিরাপদ? পানির জারে শ্যাওলা পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে ভাবা জরুরি হয়ে পড়েছে। জনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে এর আগেও বাংলাদেশ প্রতিদিন গোলটেবিলের আয়োজন করেছে। মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করে যাব।
গোলটেবিল বৈঠকটির মিডিয়া পার্টনার হিসেবে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ২৪। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন নিউজ২৪ এর চিফ রিপোর্টার নাজনীন মুন্নী।
পানির অপচয় রোধ করার আহ্বান জানিয়ে আলিম বারী বলেন, যেখানে দেশের বৃহৎ একটা অংশ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না, অনেকে বিশুদ্ধ দূরের কথা, সুপেয় পানিই পাচ্ছে না, সেখানে আমরা অনেকে প্রচুর পানি অপচয় করছি। দৈনিক একজন মানুষের ২০ লিটার পানি প্রয়োজন বলা হলেও শুধু থালা-বাসন ধুতেই এর চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পানি। কিন্তু এ পানি যখন উপরে উঠে সরবরাহ পাইপে ঢুকছে তখন এটা সবচেয়ে দূষিত পানিতে পরিণত হচ্ছে। স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা মিশছে পানিতে। এছাড়া ভূগর্ভের পানি ক্রমশঃ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদনে অতিরিক্ত সার, কিটনাশক ব্যবহার ব্যবহার হচ্ছে। সেগুলো জলাশয়ে মিশছে। চলে যাচ্ছে ভূগর্ভে। কল-কারখানা তাদের বর্জ্য সরাসরি নদী ও জলাশয়ে নিঃসরণ করছে। ৭০ ভাগের বেশি কারখানা পাইপ দিয়ে সরাসরি তাদের বর্জ্য ভূগর্ভে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে ভূগর্ভের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এদিকে নজর দেওয়া জরুরি।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুসা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, আইসিডিডিআরবি'র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মনিরুল আলম, এলজিআরডি'র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল হাসান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম ইব্রাহিম, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাউথ এশিয়া ওয়াশ রেজাল প্রোগ্রামের হেড অব কান্ট্রি কোঅর্ডিনেশন ইউনিট পার্থ হেফাজ সেখ, ওয়াসার সাবেক এমডি ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আজহারুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, স্যানিটেশন ও পানি বিশেষজ্ঞ আব্দুল হাকিম, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা, র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম, ব্যারিস্টার আহসান হাবিব প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ