কাগজে-কলমে বক্সখাট। কিন্তু বাস্তবে চৌকি। বক্সখাট নামের এমন কয়েকশ’ চৌকি পড়ে আছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের বারান্দা থেকে শুরু করে রান্নাঘর পর্যন্ত। এ কারনে চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নিম্মমানের বক্সখাট নামের চৌকিগুলো শিক্ষার্থীরা গ্রহন না করায় বিপাকে পড়েছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদাপত্র পাঠানোর ২ বছর পর এই খাট পাঠানো শুরু করেছে বনশিল্প কর্পোরেশন। নিম্মমানের কাঠ দিয়ে হালকাভাবে নির্মান করা খাটগুলোর একেকটির সরকারী মূল্য প্রায় ১২ হাজার টাকা ধরা হলেও এই ধরনের চৌকি তৈরী করতে দেড় থেকে ২ হাজার টাকার বেশী খরচ হবেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে ২০১৪ সালে মেডিকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মরহুম ডা. শহিদুল ইসলাম ৮৫০টি বক্সখাট, ১ হাজার ১শ’ ১২টি টেবিল, ১ হাজার ১৫০টি চেয়ার, ১ হাজার ১শ’ ১২টি আলনা এবং ১ হাজার ১শ’ ১২টি লকারের চাহিদা পত্র পাঠিয়েছিলেন বনশিল্প কর্পোরেশনে। কিন্তু ওই সময় বনশিল্প কর্পোরেশন এসব আসবাবপত্র সরবরাহ করেনি।
শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের স্টোর অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ২ বছর আগে ৮৫০টি বক্সখাটের চাহিদার বিপরীতে সম্প্রতি ৫৩০টি খাট (চৌকি) বনশিল্প কর্পোরেশন থেকে মেডিকেল কলেজে সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যান্য আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়নি। চাহিদার বাকী খাট আর কোন প্রয়োজন নেই বলে বনশিল্প কর্পোরেশনকে লিখিতভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর একেকটি খাটের মূল্য ১১ হাজার ৮শ’ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টোর অফিসার।
এদিকে চৌকি নামের খাটগুলো বরিশাল আনার পর সেগুলো ফেলে রাখা হয়েছে ছাত্রাবাসের বারান্দায়, ডাইনিং রুমে এমনকি রান্নাঘরেও। এতে শিক্ষার্থীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। শত শত শিক্ষার্থীর রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রাবাসের ডাইনিং কর্মচারী।
শিক্ষার্থীরা জানান, অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের পূর্বের অধ্যক্ষ ডা. আবরার আহমেদ তার সময়ে ছাত্রাবাসগুলোতে বক্সখাট সরবরাহ করে বনশিল্প কর্পোরেশন। ওই খাটগুলো এখনও ভালো রয়েছে। কিন্তু এখন যে খাট পাঠানো হয়েছে তা একেবারে চৌকির আদলে নিম্মমানের কাঠ দিয়ে তৈরি করা। এগুলো হালকাভাবে তৈরী করায় ব্যবহারের আগেই লক্কর ঝক্কর হয়ে গেছে।
ঢাকায় এগুলো নির্মাণ করা হলেও এতে রং করা হয়েছে বরিশালে এনে। নিম্মমানের হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পুরনো বক্সখাট বদলে নতুন বক্সখাট নামের চৌকি নিতে চাচ্ছেন না। এ কারনে তাই সেগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অনেক আগে তাদের সরবরাহ করা বক্সখাটগুলো নতুন বক্সখাট নামের চৌকির চেয়েও মজবুত। ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে এর একটি খাট তৈরি করা সম্ভব হলেও একেকটি খাটের বিপরীতে প্রায় ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বনশিল্প কর্পোরেশন।
এদিকে কি কাঠ দিয়ে এগুলো নির্মান করা হয়েছে তাও স্পস্ট করতে পারেননি মেডিকেলে কলেজের কর্মকর্তারা। তাদের ধারণা পাহাড়ের যে কোন কাঠ দিয়েই তৈরী হয়েছে এসব চৌকি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বনশিল্প কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. ভাস্কর সাহা জানান, চাহিদার অর্ধেক খাট তারা বুঝে পেয়েছেন। এগুলো সার্ভে কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরন করা হচ্ছে। খাটগুলো চাহিদাপত্র অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে কিনা কিংবা নিম্মমানের কাঠ দিয়ে এগুলো নির্মান করা হলে সার্ভে কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ মে, ২০১৬/ হিমেল-২৭