ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের নগরীর সিমান্তবর্তী কীর্তনখোলা নদীর উপর নির্মিত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া) ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় ১ বছর আগে মালবোঝাই কার্গোর ধাক্কায় সেতুর মূল পিলারের সেইভ গার্ড ভেঙ্গে গিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কোন নৌযান ফের ওই স্থানে আঘাত হানলে সেতুর মূল পিলার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি পুরো সেতুটিই বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এক বছর আগে এই দুর্ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্থ সেতু মেরামতের নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে সেতুর নিচে কোন সংকেত বাতিও নেই। যে কারনে এখনো ঝুঁকি নিয়ে নৌযান চলছে ওই সেতুর নীচ দিয়ে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী কীর্তনখোলা নদীর উপর নির্মিত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরিশাল সদর উপজেলার আংশিক ছাড়াও ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, কুয়াকাটা এবং পায়রা সমূদ্র বন্দরের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সহজতর করেছে প্রায় ২০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু।
প্রতিদিন অন্তত সহশ্রাধিক ভারী যানবাহন চলাচল করে এই সেতুর উপর দিয়ে। আবার চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ছাড়াও ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, বরিশাল, ঝালকাঠী ও যশোরের নওয়াপাড়ায় চলাচল করা জ্বালানী ও মালবাহী বড় বড় জাহাজগুলোও এই সেতুর নীচ দিয়ে চলাচল করে। বিআইডব্লিউটিএ’র হিসেবে প্রতিদিন এই সেতুর নীচ দিয়ে অর্ধশতাধিক বড় বড় জ্বালানী ও মালবাহী জাহাজ চলাচল করে। এছাড়াও ঢাকা-ঝালকাঠী, ঢাকা-বরিশাল-মোড়লগঞ্জ রুটেও চলাচল করে যাত্রীবাহি বড় বড় লঞ্চ এবং স্টিমার।
এক বছর আগে সেতুর ওই সেইভ গার্ড ভেঙ্গে গেলেও তখন এ নিয়ে কোন তৎপরতা দেখা যায়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। অতি সম্প্রতি বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান সেতুর ক্ষতিগ্রস্থ সেইভ গার্ডার পরিদর্শন করেন। এরপরই জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সেতুর ভেঙ্গে যাওয়া সেইভ গার্ডার মেরামতের জন্য সওজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিসির এমভি মধুমতি জাহাজের বিদায়ী মাস্টার বদরুল আমিন বলেন, কীর্তনখোলা নদী পেড়িয়ে তাদের ঝালকাঠী থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু যখনই আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতু অতিক্রম করেন তখনই শংকায় থাকেন। কোন সাংকেতিক চিহৃ না থাকায় প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে সেতুর নীচ অতিক্রম করতে হয় নৌযান মাস্টারদের। সাংকেতিক বাতি এবং সেইভ গার্ড না থাকায় নৌযান চালকরা যে কোন সময় সেতুর মূল পিলারে আঘাত হানতে পারে বলে তিনিও আশংকা করেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান জানান, সেতুর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ পরিদর্শন করে সেটি মেরামতের জন্য জেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সওজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও তিনি নিজে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন করে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেছেন।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ শাহেদ বলেন, সেতুর সাপোর্টের জন্য মাঝ নদীতে পিলার স্থাপন করতে হবে। নদীর উপরিভাগে যতটুকু, নদীর তলদেশেও ততটুকু পিলার স্থাপন করতে হবে। এটা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ এবং বড় কাজ। এ লক্ষ্যে পিলারের ডিজাইন করা হচ্ছে। এরপরও কেন্দ্রীয় দপ্তরে বরাদ্দ চাওয়া হবে। বরাদ্দ পেলে যত দ্রুত সম্ভব সেতুর সেইভ গার্ড নির্মান করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/০৭ জুন ২০১৬/হিমেল-০৬