চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ খ্যাত কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরে গড়ে উঠেছে অবৈধ দুই হাজার ১৮১টি স্থাপনা। এসব স্থাপনা উচ্ছেদে গত বছরের ১৬ আগস্ট আদালত ৯০ দিনের সময়সীমা বেধে দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশনার পরও এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। ফলে দখল-দূষণে জমছে পলি, ভরাট হচ্ছে নদী। কমছে নাব্যতা ও প্রশস্ততা। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় অর্থ সংকট আছে। তাই এ ব্যাপারে বরাদ্দ পেতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। জানা যায়, গত ২ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত বৈঠকে আদালতের নির্দেশনা মতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় দখলদারদের তালিকা পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সভায় উচ্ছেদ বাজেট বরাদ্দ চাওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেট চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য এক কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ইতোমধ্যে আমরা উচ্ছেদ সংক্রান্ত নানা দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করেছি। আমাদের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে আদালতকে অবহিতও করা হয়েছে।’
সরেজমিন দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর চাক্তাই ও রাজাখালী অংশে প্রতিনিয়ত দখল চলছে। রাজাখালী খালের তীর ভরাট ও দখল করে মাছ ধরার ছোট বড় নৌকা তৈরি করা হচ্ছে। খালের মধ্যে বাঁশ, লোহার পাত দিয়ে বালু ফেলে তীর ভরাট করা হচ্ছে। দখল করা জায়গার ভাড়া নেয়া হচ্ছে নৌকা বোটের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। খালের তীরে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য টং ঘর ও খোলা পায়খানা বানানো হয়েছে। এছাড়াও নদীর তীরে ড্রেজিংয়ের ভরাট মাটি দখল করে নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০১০ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এণ্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দাখিল করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এতে কর্ণফুলী নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে নদীর সীমানা নির্ধারণ, দখল, ভরাট ও নদীতে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১০ সালের ১৮ জুলাই কর্ণফুলী নদীর সীমানা চিহ্নিত করার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেন। ২০১৫ সালে দখলদারদের তালিকা চূড়ান্ত করেন এবং তার কপি আদালতের কাছে হস্তান্তর করেন। এরই আলোকে গত বছরের ১৬ আগস্ট অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি করে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদের বাইরে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ছয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কন্টেইনার ডিপো, শিল্পকারখানা স্থাপন করে নদী দখল করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদী নিয়ে মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কর্ণফুলী নদীকে নিয়ে প্রস্তুত করা হয় মাস্টারপ্ল্যান। এ মাস্টারপ্ল্যান সামনে রেখে কর্ণফুলী রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার