৯ অক্টোবর, ২০১৯ ২২:৪৪

দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী র‌্যালি করলেন যুবলীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী:

দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে দুর্নীতি বিরোধী র‌্যালি করলেন যুবলীগ নেতা

যুবলীগ নেতা আশরাফ বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ঠিকাদারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার। মাত্র ৭-৮ বছরের মধ্যে 'জিরো থেকে হিরো' হয়েছেন তিনি। 

সেই যুবলীগ নেতা নেতৃত্ব দিয়ে আজ রাজশাহী নগরীতে করিয়েছেন দুর্নীতি বিরোধী র‌্যালি। স্থানীয় কিছু লোক ভাড়া করে বুধবার সকালে এই র‌্যালি করান রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ বাবু। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সম্প্রতি তাকে শোকজ করাও হয়েছে। 

আজ তার নেতৃত্বেই নগরীর শিরোইল কলোনী এলাকা থেকে দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগরীর একই এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিজের অপকর্ম আড়াল করতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে এই র‌্যালি করেন আশরাফ বাবু। এ কারণে তার এই র‌্যালিতে নগর আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের অন্য শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি। 
 
অভিযোগ আছে, আশরাফ বাবু পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে অথবা প্রভাব খাটিয়ে শত কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। যে কাজগুলো নামকোয়াস্তে করেই বিল উত্তোলন করেছেন। আবার কখনো কখনো কাজ না করেই আগেই বিল তুলে নিয়েছেন। পরে কিছু কাজ করে পুরো টাকা লুটে নিয়েছেন। 
 
রাজশাহীর একটি গোয়ন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিতর্কিত এই নেতা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেইদিক থেকে আমরা নজর রাখছি। অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তার বিষয়ে আরো অনুসন্ধান চলছে। গত কয়েক বছরে কিভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন তিনি, সেসব ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
 
মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ বাবু নগরীর ডাবতলা হাজরা পুকুর এলাকায় ছোট্ট একটি ওষুধের দোকানের ব্যবসায়ী ছিলেন। পাশাপাশি দোকানে দোকানে সাইকেল নিয়ে প্যারাসিটামল ও স্যালাইন বিক্রি করতেন। নগরীর শিরোইল এলাকায় একটি টিনসেডের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এই আশরাফ বাবু ২০১২ সালের দিকে রেলওয়ের বড় ঠিকাদার শহিদের মাধ্যমে রেল ভবনে ঢোকেন। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে শহিদকে প্রভাব খাটিয়ে কাজ পাইয়ে দিতে তিনি রেল ভবনে যাতায়াত শুরু করেন। একপর্যায়ে নিজেই রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিনা টেন্ডারে কাজ বাগিয়ে নিতে শুরু করেন। এখন কোটি কোটি টাকার মালিক এই আশরাফ বাবু। নিজের ফেসবুক পেজে রেলওয়ের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 
 
নগরীর শিরোইল এলাকায় নিজের ব্যক্তিগত আলিশান কার্যালয়ে আছে সিসি ক্যামেরাও। নগরীর আসাম কলোনী এলাকায় আছে তার আলিশান বাড়ি। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আছে তার সখ্যতা। আশরাফ বাবুর উত্থান নিয়ে নগরজুড়ে আছে নানা কথা। এরই মধ্যে আশরাফ বাবুর সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
 
বিষয়টি স্বীকারও করেছেন আশরাফ বাবু। তিনি বলেন, ‘তারা আমার কাছে এসেছিল। আমার যা যা আছে, আমি বলে দিয়েছি। কোনো কিছুই লুকাইনি। আমি কোনো অনিয়ম করে টাকা কামাই করিনি। দলের নাম ভাঙিয়ে চলি না। বরং মহানগর যুবলীগের সভাপতিসহ যারা নানা অপকর্মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান। আমাকে শোকজও করা হয়েছে অন্যায়ভাবে।’ 
 
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে আমাকে শোকজ করা হয়। এটি তারা করতে পারে না। দফতর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ শোকজ করা হয়। কিন্তু এই দফতর সম্পাদকের বিরুদ্ধেই আছে জমি দখলের অভিযোগ।’
 

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর