পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন সাভার উপজেলার জয়নাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন। সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে, খোদ দুযোর্গ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর হাসপাতালে (এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) করোনা সন্দেহে চিকিৎসা মেলেনি ওই ব্যবসায়ীর।
জানা গেছে, শরীরে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জসিম উদ্দিন ভর্তি হয়েছিলেন স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে করোনা সন্দেহে কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। যে কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার ভোরে মারা যান তিনি।
মৃত জসিম উদ্দিন (৫২) ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজনগর গ্রামের মমতাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি সাভারের জয়নাবাড়ী এলাকায় বাড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছিলেন।
জসিম উদ্দিনের বড় শ্যালক রেজাউল বলেন, জসিমের বংশগত হাঁপানি এবং অ্যাজমা রোগ ছিল। গত দুই বছরের মধ্যে সে দুই বার স্ট্রোক করেছে। এজন্য তার মুখ বাঁকাসহ শরীরেও সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে হঠাৎ করে রবিবার সকালে জসিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসাতালে নেয়া হয়। পরে তিন হাজার টাকা নিয়ে ৬০৭ নম্বর ক্যাবিনে ভর্তি করানোর কিছুক্ষণ পরই করোনার গুঞ্জন উঠিয়ে আমাদেরকে হাসপাতাল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে রোগীর চিকিৎসা বন্ধ করে রাত ৯টায় আমাদেরকে জোর করে বের করে দেয়।
জসিম উদ্দিন যে হাসপাতালে মারা গেছেন, সেখানকার চিকিৎসক বলেছেন, তার মৃত্যু হয়েছে হৃদ্রোগে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক আলামতে তার দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি।
জসিম উদ্দিনের অপর শ্যালক ইকবাল হোসেন বলেন, আমার ভগ্নিপতিকে আনসার ডেকে এনাম মেডিকেল থেকে বের করে দেওয়ার পর সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসকেরাও করোনা সন্দেহ করে আমাদেরকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের কথামতো রাত ১১টায় কুর্মিটোলা নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা করা হলেও করোনায় আক্রান্ত থাকার লক্ষণ মেলেনি। তাই চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ৬০১ নম্বরে ভর্তি করে দেয়া হলেও ইউনিট ম্যানেজার আমাদেরকে না রেখে বের করে দেন। এরপর বাধ্য হয়ে তাকে ঢাকার বাবুবাজার এলাকার ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর রাত তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
স্বজনরা অভিযোগ করেন, এনাম মেডিকেল বের করে দেয়ার পর পাঁচটি হাসপাতাল ঘুরে আমাদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোগী নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে তার সাথে থাকা চারজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে গেছে।
অভিযোগের প্রসঙ্গে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, জসিম উদ্দিনকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তাকে জোর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ সত্যি নয়। আর তার করোনাভাইরাসের লক্ষণ ছিল কি না, তা আমার জানা নেই।
এনাম মেডিকেলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) সব ধরনের সুবিধা থাকার পরও জসিমকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান আনোয়ারুল কাদের।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল