করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহে অপারগতা এবং বিরক্তি প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। এমনকি করোনা সংক্রান্ত কোন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছেনা তার কাছে। সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে করোনা সম্পর্কিত তথ্য না দেওয়াসহ করোনা যুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ করেছেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করার কথা। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে, সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে করোনা উপসর্গের নমুনা সংগ্রহের কোন উদ্যোগ না থাকায় শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাপাতালের ওপর চাপ বাড়ছে বলে দাবি করেছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, গত শনিবার বিকেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক রোগীর স্বজনরা তার নমুনা সংগ্রহ করার জন্য পুলিশের সহযোগীতা চায়। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে সিটি করপোরেশনের ডাক্তারকে ফোন করা হলেও তাদের টেকনোলজিস্ট অসুস্থ্য থাকার কারণে তিনি ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জনকে ফোন দেওয়া হলে তাদের পক্ষে বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। পরে সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেনকে ফোন দিলে তিনিও বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন।
বিষয়টি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে জানানো হলে তিনি এবং জেলা প্রশাসক বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে অবহিত করেন। স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস সিভিল সার্জন ডা. মানোয়ার হোসেনকে ওই নমুনা সংগ্রহ করতে বলেন। এরপর সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন তাকে (ওসি) ফোন দিয়ে বলেন, আপনাদের অনুরোধে আজকে এই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে দিলাম। ভবিষ্যতে যেন এসব ব্যাপারে তাকে অনুরোধ করা না হয়।
ওসি নূরুল ইসলাম জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে যখন নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ততক্ষণে ৬ ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে। শহরের একজনের নমুনা সংগ্রহ করতে যদি ৬ঘন্টা লাগে, তাহলে গ্রামেগঞ্জের মানুষ যাবে কোথায়।
নানা উপসর্গ থাকায় গত ৩ জুন বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওইদিনই তার নমুনা পাঠিয়ে দেয়া হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। কিন্তু তারপর ৩দিন ওই নমূনা পড়েছিলো সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে সিভিল সার্জন ওই নমুনা পরীক্ষা করিয়ে গত রবিবার আবদুল্লাহ সাদীদের করোনা নেগেটিভ বলে ফোনে জানিয়ে দেন।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, করোনা সংক্রান্ত জেলার সকল তথ্য সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু সিভিল সার্জন কোন ধরনের সহযোগীতা করছেন না। আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনা পর্যন্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা করছেন না তিনি। তথ্য দিয়েও সহযোগীতা করছেন না। আবার কখনো তথ্য দিলে তা ভুলে ভরা থাকে। সকালের তথ্য বিকেলে, বিকেলের তথ্য পরদিন সকালে দিচ্ছেন। ওই ভুল তথ্য জনগনকে দিলে তার দায় জেলা প্রশাসনের। তাই জেলা প্রশাসন থেকে ওই তথ্য যাচাই করে গনমাধ্যমে দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, গত শনিবার বিকেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের হিমশিম খেতে হয়েছে। মৃত্যুর ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর এক রকম চাপ প্রয়োগ করে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ করানো হয়। এ নিয়ে কোতয়ালী থানার ওসি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।
সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে করোনা যুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ করেছেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ও করোনা চিকিৎসা মনিটরিং কমিটির সদস্য ডা. সুদীপ হালদারও।
ডা. সুদীপ হালদার জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের কথা। কিন্তু তারা নমুনা সংগ্রহ করছেন না। জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে জেনারেল হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন, পুলিশ হাসপাতাল সহ সবাই নমুনা সংগ্রহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে চাপ পড়ছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর।
সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে করোনা সংক্রান্ত কোন তথ্য দিয়ে সহযোগীতা না করার অভিযোগ করেছেন বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক মুরাদ আহমেদ ও সাইফুর রহমান মিরন।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, সিটি এলাকায় নমুনা সংগ্রহের কথা সিটি করপোরেশন। তারা নমুনা নিচ্ছে না। সিটি এলাকায় সিভিল সার্জনের কোন সেটাপ বা জনবল নেই। তাই সিটিবাসীর নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে সিটি এলাকায় থাকা শের-ই বাংলা মেডিকেল এবং জেনারেল হাসপাতালের। জেনারেল হাসপাতালে একজন মাত্র টেকনোলজিস্ট। তার একার পক্ষে পুরো সিটি এলাকার নমুনা সংগ্রহ অসম্ভব।
সিভিল সার্জন বলেন, বানারীপাড়ার ইউএনও’র নমুনা তার কার্যালয়ে ৩দিন পড়ে থাকার অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখেননি। এটা একটা ভুল। এ কারনে জেলা প্রশাসক ক্ষুব্ধ হতে পারেন। করোনার তথ্য বিলম্বে দেয়া বা ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সিভিল সার্জন বলেন, তথ্য পেলে সেটাকে যাচাই করে দিতে একটু সময় লাগতেই পারে।
বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ